ভোলায় সেচ সংকট ও লবণাক্ত পানিতে নষ্ট হচ্ছে বোরো ধান
দ্বীপজেলা ভোলার চরফ্যাশনে দুর্বল স্লুইসগেট দিয়ে লবণাক্ত পানি ঢুকে বোরো ফসলের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। আর খালে অপরিকল্পিত বাঁধ, কালভার্ট নির্মাণ ও ভরাটের ফলে পানির জন্য কৃষকদের মধ্যে চলছে হাহাকার। ফেটে চৌচির হয়ে গেছে বোরো ফসলের জমি। ঋণের ভারে দিশেহারা কৃষকরা।
ভোলার সদর থেকে অন্তত ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে চরফ্যাশনের আসলামপুর ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের কৃষক মো. শাজাহান। ক্ষতির মুখে পড়েছেন বোরোর আবাদ করে। তিনি জানান, কৃষকদের না জানিয়ে সব খাল বন্ধ করে কালভার্ট নির্মাণ করায় বিপাকে পড়েছেন তারা। একদিকে সাগড়ের লবণাক্ত পানি অপরদিকে মিষ্টি পানি না থাকায় এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এখানকার কৃষকরা।
ভোলা জেলার চারপাশেই নদী। পশ্চিমের তেঁতুলিয়া আর পুবে মেঘনা নদী দ্বারা বেষ্টিত। এখানকার কৃষকরা তেঁতুলিয়া নদীর মিষ্টি পানির উপরই বেশি নির্ভর করে ফসল ফলায়। তবে মেঘনা নদীর পানিতে লবণের মাত্রা বেশি হলে তা ব্যবহার করতে পারে না কৃষকরা। এ বছর ভোলার চরফ্যাশনের মেঘনা নদী সংলগ্ন শত শত একর জমির ফসল লবণাক্ত পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে্। অপরদিকে পানি দিতে না পারায় ফেটে চৌচির হয়ে গেছে কৃষকের বোরো ফসলের মাঠ।
কৃষক মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, অনেক আশায় বোরো ধানের চাষ করেছি। এ বছর এমন বিপদ হবে, তা বুঝতে পারিনি। সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রধান সড়কের কালভার্ট নির্মাণ করতে গিয়ে সব খালে বাঁধ দিয়েছে। এর ফলে পানি আসতে না পারায় বিপদে আছি আমরা।
কৃষক মো. ইয়াকুব আলী বলেন, একটি স্লুইসগেট দিয়েছে, যা নষ্ট থাকায় লবণাক্ত পানি ঢুকে সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের জন্য স্থায়ী পানির ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।
চরফ্যাশনের বেতুয়ায় ২০০৫ সালে নির্মিত নিম্নমানের স্লুইসগেট কোনোই কাজে আসে না এখানকার কৃষকসহ সাধারণ মানুষের। স্লুইসগেট দিয়ে সাগড়ের লবণাক্ত পানি ঢুকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের।
এ ছাড়া খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি আসছে না। ঋণ নিয়ে বোরো ধান চাষ করে এখন বিপাকে কৃষকরা। তাদের দাবি বারবার কৃষি অফিস, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সবাইকে অবহিত করা হলেও তারা কর্ণপাত করছে না।
সাংবাদিকরা ক্ষতিগ্রস্ত বোরো ধানক্ষেত দেখতে এসেছেন শুনে ছুটে আসেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন। সব দেখে-শুনে লবণাক্ত পানিতে বোরো ধানের চারা নষ্ট হয়ে যাওয়া আর পানির অভাবে বোরো ধানক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়ার ঘটনা স্বীকার করে নেন তিনি।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এখানে গভীর নলকূপ এবং ক্ষতিগ্রস্ত স্লুইসগেট মেরামত করা হলে কৃষকরা উপকৃত হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে সমস্যার কথা অবহিত করেছেন জনিয়ে মো. মনির হোসেন বলেন, এটা আমাদের কাজ নয় বিআরটিসির কাজ। তারা আমাদের কাছ থেকে চাহিদা নিয়েছে তবে কাজ শুরু করেনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকেও অবহিত করেছি, কোনো কিছু হয়নি। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
চরফ্যাশন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন বলেন, তারা স্লুইসগেট নির্মাণ ও খাল খননের জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। একনেকে পাস হলেই ক্ষতিগ্রস্ত স্লুইসগেট মেরামত এবং ১০ বেন্টের আরেকটি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হবে। যাতে সেখান দিয়ে ট্রলার ও নৌকা চলাচল করতে পারে। একইসঙ্গে ১৯ কিলোমিটার খাল খনন করা হবে। এসব করা সম্ভব হলেই কৃষকদের আর সমস্যা থাকবে না। তারা সহজেই পানি পাবে এবং লবণাক্ত পানির প্রবেশ ঠেকানো সম্ভব হবে।