মধুমতি নদীর সঙ্গে কংশুর খালের সংযোগ : উৎপাদন বাড়বে ১০ হাজার মেট্রিক টন ধানের
দীর্ঘ ৫৫ বছর পর গোপালগঞ্জে মধুমতি নদীর সঙ্গে কংশুর খালের সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। পাকিস্তান আমলে ১৯৬৮ সালে মধুমতি বিলরুট চ্যানেলের (কাটা মধুমতি নদী) ভাঙন দেখা দেওয়ায় এই খালের মুখটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া, দুর্গাপুর, কাজুলিয়া ও কাঠি ইউনিয়নের অন্তত ৩৫টি গ্রামের কৃষক চাষাবাদে ক্ষতির সম্মুখীন হন। এসব গ্রামের কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন খালটি নদীর সাথে সংযোগের উদ্যোগ গ্রহণ করে। পরে ২০০ মিটার দীর্ঘ খালটি খনন করা হয়। গত শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে সংযোগ স্থাপনের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম। পরে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুন্নাহার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়জুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহসিন উদ্দীন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মামুন খান, উলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বাবুলসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় করপাড়া ইউনিয়নের কংশুর গ্রামের কৃষক মো. ফুল মিয়া খান (৪৫) বলেন, পানির অভাবে আমাদের চাষাবাদ করতে সমস্যা হতো। স্যালো দিয়ে পানি তুলে চাষাবাদ করতে হত। অনেক জমি পানির অভাবে অনাবাদি থাকত। এখান নদীর সাথে খালের সংযোগ হওয়ায় আমাদের সব জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে।
একই গ্রামের কৃষক মো. হাফিজুর মোল্লা (৫৫) বলেন, জমির পানি নদীতে নামার ব্যবস্থা না থাকায় এসব এলাকার কৃষি জমিতে স্থায়ী জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এই খালটির সাথে ১২টি খালের সংযোগ রয়েছে। নদীর সাথে খালটির পুনঃসংযোগ স্থাপন হওয়ায় এই সব ইউনিয়নে আনাবাদী জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। এতে ফসল উৎপাদন বাড়বে। এখন আর ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভর করতে হবে না। ফসল উৎপাদনে সেচ খরচ কমবে।
করপাড়া ইউনিয়নের বনগ্রামের কৃষক একরাম আলী খান (৬৫) বলেন, ‘এখন থেকে খালপাড়ের বাসিন্দারা খালের পানি দিয়ে দৈনন্দিন কাজ করতে পারবে। চাষাবাদে ব্যবহার করতে পারবেন। কংশুর খালসহ এই খালের সাথে সংযুক্ত অন্যান্য খালের পানি সরবরাহ বাড়বে। এতে কৃষক ও সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।’
করপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নোয়াব আলী ফকির বলেন, ‘এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এই খালটির বন্ধমুখ নদীর সাথে সংযোগ স্থাপন করা। দীর্ঘ ৫৫ বছর পর এলাকাবাসীর দাবি পূরণ হলো। এতে এলাকাবাসী খুশি। এলাকার কৃষকদের মধ্যে খুশির আমেজ বিরাজ করছে।’
স্থানীয় করপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা এসএম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এই খালটির বন্ধমুখ নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হওয়ায় করপাড়া, দুর্গাপুর, কাজুলিয়া ও কাঠি ইউনিয়নের বলাকইড়, বনগ্রাম, হাটবাড়িয়া, কংশুর, তারগ্রাম, পিঠাবাড়ীসহ ৩৫টি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হয়েছে। খালটির মুখ বন্ধ থাকায় এসব ইউনিয়নের অনেক জমিতে স্থায়ী জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আর শুষ্ক মৌসুমে বোরো আবাদে সেচ দিতে পানির সংকটে পড়তে হতো এলাকার কৃষকদের। এখন আর পানির সংকট হবে না। এখন সকল জমি চাষের আওতায় আসবে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়জুর রহমান বলেন, ‘এই খালটির মুখ দীর্ঘ ৫৫ বছর বন্ধ ছিল। শুক্রবার খালটি নদীর সাথে সংযোগ স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে। এতে খালটিতে জোয়ার ভাটা সৃষ্টি হবে। শুষ্ক মওসুমে সেচ কাজে এই খালের পানি ব্যবহৃত হবে। ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমবে। অনাবাদী ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। এতে অন্তত ১০ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদিত হবে।’
জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, ‘নদীর সাথে খালটির পুনঃসংযোগ স্থাপন হওয়ায় এলাকায় চাষাবাদের উন্নয়ন ঘটবে। অনাবাদি জমিতে আবাদ হবে। এতে বাড়তি ফসল উৎপাদিত হবে। দেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বনির্ভর হবে।’