মাউশির মহাপরিচালককে আদালত অবমাননার নোটিশ
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে আদালত অবমাননার নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. আবুবকর সিদ্দিক (রাজন)। উচ্চ আদালতের রায় অমান্য, আদালত অবমাননার মামলার নির্দেশ না মানা ও অসৎ উদ্দেশে রায়ের অপব্যাখ্যার কারণে আজ রোববার তাঁকে নোটিশ পাঠানো হয়।
নোটিশে তিন দিনের মধ্যে রায় বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। অন্যথায় নতুন করে আদালতকে অবজ্ঞার কারণে মামলা দায়ের করা হবে বলে নোটিশে জানানো হয়। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে দায়ের করা অবমাননার মূলতবি মামলাটি চালুর কথাও বলা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের গত ২ অক্টোবরের চিঠিতে বলা হয়, আদালতের নির্দেশনা না মেনে ইচ্ছাকৃত রায় অমান্য করে সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্ব, মর্যাদা ও মহিমাকে ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। জনসাধারণের বিশ্বাসে সুপ্রিম কোর্টকে অবনমিত করা হচ্ছে। বিবাদীর আচরণ আদালত অবমাননার জন্য চরমভাবে দায়ী। আইন অনুযায়ী এর মোকাবিলা করতে হবে, যা শাস্তিযোগ্য।
নোটিশে আদালতের রায় উল্লেখ করে বলা হয়, “আবেদনকারীরা এখনও কোনো এমপিও পাচ্ছেন না। তাই আমরা বিবাদীদের ২০০৮ সালের ১২ নভেম্বর থেকে এমপিও ছাড়ের নির্দেশ দিচ্ছি। কারণ, আইন অনুসারে এটি তাদের প্রাপ্য। অথচ গত ২ অক্টোবরের অবমাননাকর চিঠিতে ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য উদ্দেশমূলক রায়কে ভিন্ন পথে পরিচালনা করতে রায়ের অপব্যাখ্যা করেছেন যে ‘জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু, আদালত ২০১৭ সালের ৩১ মে মাসের রায় ও আদেশে এমপিও ঠিক করার ক্ষমতা কর্তৃপক্ষকে দেননি বরং, আদালত আপনাকে ২০০৮ সালের ১২ নভেম্বর থেকে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর মডেল কলেজের এমপিও ছাড়ের নির্দেশ দিয়েছেন।”
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক চিঠিতে বলেছেন—শিক্ষকদের এমপিও ছাড় করা হলে হাজার হাজার মামলা হবে। মহাপরিচালকের এই বক্তব্যকেও আদালত অবমাননা হিসেবে উল্লেখ করেছেন আইনজীবী।
নোটিশে আরও বলা হয়, যখন সুপ্রিম কোর্ট কোনো রায় দেন, তখন সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষ সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদের অধীনে সুপ্রিম কোর্টকে সাহায্য করতে বাধ্য। আদালতের এই রায়ের পর তা না মানা চরম অবমাননাকর। এ বিষয়ে আপনার সামগ্রিক আচরণ আদালতের আদেশের অবমাননাকর এবং আদালতের চরম অবমাননার জন্য আপনি আইন অনুসারে তা মোকাবিলা করতে বাধ্য।
আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. আবুবকর সিদ্দিক বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রায়ের অপব্যাখ্যা করেছেন। উচ্চ আদালত রায়ে ২০১৭ সালের ৩১ মে’র রায়ে ২০০৮ সালের ১২ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১১ বছর সাত মাস ১৯ দিনের এমপিও ছাড় করতে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন। রায়ের সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে দুই দফা চিঠি দিয়েছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আইন উপদেষ্টাও রায় বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছেন। এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ৭ জুলাইয়ের এমপিও বৈঠকেও বয়েকা প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু, মহাপরিচালক রায়কে অসৎ উদ্দেশ্যে ভিন্ন পথে পরিচালিত করতে এর অপব্যাখা করে জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন, যা আইন পরিপন্থি। রায়ে মন্ত্রণালয় বা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী এমপিও ছাড়ের কর্তৃত্ব দেওয়া হয়নি। রায়ে নির্দিষ্ট এমপিও ছাড়ের সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।’