মাদারীপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ১৫, বোমা বিস্ফোরণ
মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে একটি মসজিদসহ অন্তত পাঁচটি বসতঘরে ভাঙচুর চালানো হয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
আহতদের মধ্যে তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে শহরের সৈদারবালী এলাকায় দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে চারজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন সৈদারবালী এলাকার নাজিমউদ্দীন রহমানের ছেলে জিয়াউর রহমান (৪১), মতিউর রহমান হাওলাদারের ছেলে মিনহাজুর রহমান (১৬), ২নং শকুনি এলাকার কাজী মাইনুদ্দিনের ছেলে আ. হাকিম (৫০) ও শামীম মুনশির ছেলে আসিফ মুনশি (১৩)। বাকিরা জেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পৌর এলাকার সৈদারবালী ও ২নং শকুনি এলাকার কিশোরদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। কিছুদিন আগে সৈদারবালী এলাকার সেকেন হাওলাদারের ছেলে রোমান হাওলাদার শকুনি এলাকায় গেলে সাগর মুনশি ও তার সহযোগীরা মারধর করে রোমানকে। ঘটনার কিছুদিন পরে শকুনি এলাকার তুষার হোসেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হলে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়। শুক্রবার সকালে শকুনি এলাকার সাগর মুনশির লোকজন হাসপাতালে তুষারকে দেখতে গেলে রোমানের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সাগর মুনশি ও রোমান হাওলাদারের সমর্থকরা সৈদারবালী এলাকার দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। এতে তিনজন টেঁটাবিদ্ধসহ আহত হয় অন্তত ১৫ জন। এ সময় বেশ কয়েকটি হাত বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে স্থানীয় একটি মসজিদসহ অন্তত পাঁচটি বসতঘরে ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা রিয়াদ মাহামুদ বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় ৮ থেকে ৯ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনা হয়। তাদের মধ্যে তিনজন টেঁটাবিদ্ধ। তাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ভর্তি রয়েছে বেশ কয়েকজন। আহতদের প্রত্যেকের শরীরে দেশীয় অস্ত্রে গুরুতর জখম রয়েছে।’
সৈদারবালী এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী সাথী বেগম বলেন, ‘কিশোর ছেলেদের মধ্যে গ্রুপিং নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। প্রথমেই হাজিরহাওলা এলাকার সৈকত, শামীম, তামিম, রায়হান, রাতুলসহ অনেক ছেলেরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের সৈদারবালী এলাকায় ঢুকে ভাঙচুর চালায়। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে আমাদের বাসার গ্লাসও ভেঙে ফেলেছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কাজী বলেন, ‘সকালে বাসায় নাস্তা খাচ্ছিলাম, হঠাৎ দেখি আমার বাসার সামনে রাকিব নামে একটি ছেলেকে কোপাচ্ছে কিছু ছেলেরা। পরে আমি ওকে গিয়ে বাঁচাই। পরে হামলাকারীরা আমার বাড়িসহ এলাকায় বেশ কিছু বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।’
এ সম্পর্কে মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে রয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। তবে উভয়পক্ষ থানায় এলে তাদের মামলা নিয়ে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’