মাদারীপুরে নৌঘাটে যাত্রীর চাপ, উপেক্ষিত লকডাউন
মাদারীপুর ঢিলেঢালাভাবে পালিত হচ্ছে লকডাউন। উন্নতি হচ্ছে না করোনা পরিস্থিতির। কিছুদিন শনাক্তের সংখ্যা কম থাকলেও বর্তমানে বাড়ছে সংক্রমণের হার। জেলায় শনাক্তের হার ৫৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, লকডাউনের আওতায় চলমান বিধিনিষেধ সঠিকভাবে না মানলে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।
জেলার অধিকাংশ এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানার তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করছেন জনসাধারণ। লঞ্চ, স্পিডবোট বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খোলা নিয়ে করছে চোর-পুলিশ খেলা। তবে জরুরি সেবার যানবাহন নিয়ে বাংলারবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল করছে। বিধিনিষেধ মানাতে জেলা প্রশাসনের কার্যকর তৎপরতার থাকলেও মানছে না কেউ। বিধিনিষেধ মেনে চলার ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে রয়েছে গা-ছাড়া ভাব।
স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসাধীন ২৫৬ জন। একই দিন ৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩১ জনের। শনাক্তের হার ৫৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আগের ২৪ ঘণ্টায় এ হার ছিল ৪৪ শতাংশ। সে হিসাবে এক দিনের ব্যবধানে শনাক্তের হার ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের।
জেলায় নতুন করে সুস্থ হয়েছেন ৩৪ জন এবং এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ২৩১৩ জন। জেলায় ২০ হাজার ৪৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় দুই হাজার ৬২৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালের আইসোলেশনে একজন এবং বাকির বাসায় বসে চিকিৎসা নিচ্ছে।
জেলায় করোনা শনাক্তের দিক দিয়ে এগিয়ে আছে সদর উপজেলা। সদরে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ১২৪২ জন, কালকিনিতে ৩৭২ জন, রাজৈরে ৬৪১ জন এবং শিবচরের রয়েছে ৩৬৯ জন। এই চারটি উপজেলার মধ্যে বর্তমানে গড়ে প্রতিদিনই শনাক্ত বেড়ে চলছে রাজৈর উপজেলায়। সেখানে সর্বশেষ করোনা শনাক্তের ৩১ জনের মধ্যে ২৪ জনই রাজৈরের।
এদিকে, আজ শুক্রবার লকডাউনের চতুর্থ দিনেও শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুট হয়ে যাত্রীদের ভিড় রয়েছে। সকাল থেকে এ রুটের ফেরিতে শিমুলিয়া থেকে দক্ষিণাঞ্চলমুখী যাত্রীদের চাপ শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের ভিড় আরও বৃদ্ধি পায়। তবে বাংলাবাজার হয়ে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় রয়েছে সহনীয় পর্যায়ে। ঘাট এলাকা বা ফেরিতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো লক্ষণই দেখা যায়নি। অনেককেই দেখা গেছে মাস্কবিহীন। লঞ্চ যথারীতি বন্ধ রয়েছে। দূরপাল্লা বা অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী যানবাহন বন্ধ থাকলেও তিন চাকা, দুই চাকার হালকা যানবাহনে যাত্রীরা গন্তব্যে যাচ্ছেন।
বরিশাল, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও থ্রি-হুইলার, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলে কয়েকগুণ ভাড়া বেশি দিয়ে ঘাটে পৌঁছাচ্ছে। পণ্যবাহী ট্রাকের সঙ্গে অন্য ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে। ফলে ফেরিতে গাদাগাদি করে পার হচ্ছে যাত্রীরা। সব ফেরি চলাচল স্বাভাবিক থাকায় যাত্রীরা ফেরিতে ভিড় করছে বেশি।
মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষের মধ্যে বিধিনিষেধ মেনে চলার প্রবণতা কম। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে করোনার বিস্তার ঠেকানো কঠিন হবে।’
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘আমরা সরকারের নির্দেশনা মতে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ বিভাগের সহযোগিতায় চেকপোস্ট বসিয়েছি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কেউ আইনশৃঙ্খলা এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানলে তাদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। লকডাউনে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। স্বাস্থ্য বিভাগের যে নির্দেশনা আছে সেগুলো আমরা মেনে চলার চেষ্টা করছি এবং অন্যদেরও মেনে চলার জন্য উদাত্ত আহ্বান করছি।’