মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি খোকা গ্রেপ্তার
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি রাজাকার সদস্য মো. জাছিজার রহমান ওরফে খোকাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-২। আজ শুক্রবার সকালে র্যাব-২-এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এএসপি শিহাব করিম এ তথ্য জানিয়েছেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে যুদ্ধাপরাধী মো. জাছিজার রহমান ওরফে খোকাসহ রাজাকার বাহিনীর অন্য সদস্যরা গাইবান্ধা সদরে হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট-অগ্নিসংযোগ, ভয়ভীতি এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ধর্মান্তর ও দেশান্তরে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী কাজ করেন। জাছিজার রহমান খোকা আলবদর এবং পিস কমিটিরও সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
জাছিজার রহমান খোকা ও অন্যান্য রাজাকার সদস্যরা একাত্তরের ১৮ অক্টোবর গাইবান্ধার সদর এলাকার সাহাপাড়া ইউনিয়নের নান্দিনা গ্রামসহ মোট আটটি গ্রামের ১৪ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে এবং মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক, ইসলাম উদ্দিন ও নবীর হোসেনসহ ৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। তারা মোট ২১ জনকে হত্যা, শতাধিক বাড়ি-ঘর লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ এবং কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষের ওপর নৃশংসভাবে হামলা চালায়।
এ ছাড়া রাজাকারেরা সাহাপাড়া ইউনিয়নের তিন থেকে চারশ সংখ্যালঘুকে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করে।
২০০৯ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে জাছিজার রহমান ওরফে খোকা ও তার বাবাসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরবর্তীতে আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দেন। ওই আদেশের প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়। সব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর জাছিজার রহমান ওরফে খোকাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
জাছিজার রহমান গাইবান্ধা সদর উপজেলার মৃত মো. আব্দুল জব্বার মন্ডলের ছেলে।
র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাছিজার রহমান জানান, ২০১৬ সাল পর্যন্ত জামিনে থাকার পর আদালত কর্তৃক জামিন নামঞ্জুর হলে তখন তিনি আত্মগোপনে চলে যান। তিনি বিভিন্ন সময় ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করতেন। তার ছেলেরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ায় তার প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তারা নিয়মিত অর্থ প্রদান করতেন। এভাবেই তিনি পলাতক জীবনযাপন করে আসছিলেন।