মানবিক পরিবেশে গড়ে তোলা হলে শিশু-কিশোররা রাষ্ট্রের সম্পদ হবে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু-কিশোরদের সম্ভাবনাগুলোকে চিহ্নিত করে সঠিক পরিচর্যা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে মানবিক পরিবেশে গড়ে তোলা হলে তারাও পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠবে। ৱ
প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল রোববার (২ এপ্রিল) ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’ উপলক্ষে আজ এক বাণীতে একথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও কাল ১৬তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালন করা হচ্ছে জেনে আনন্দিত।’ এ উপলক্ষ্যে তিনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু, ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্য, পরিচর্যাকারী, অটিজমবিষয়ক গবেষক, চিকিৎসক, থেরাপিস্ট, সহায়ক উপকরণ উদ্ভাবকসহ সংশিশ্লষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনসমূহকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য, ‘রূপান্তরের অভিযাত্রায় সবার জন্য নিউরোবান্ধব অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব গঠন’ অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু-কিশোরদের সম্ভাবনাগুলোকে চিহ্নিত করে সঠিক পরিচর্যা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে মানবিক পরিবেশে গড়ে তোলা হলে তারাও পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠবে। সমাজের সকলকে সঙ্গে নিয়েই আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করতে বদ্ধপরিকর।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গসহ সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কল্যাণে নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন-২০১৩, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) সুরক্ষা ট্রাস্ট বিধিমালা-২০১৫, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা আইন-২০১৩, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা বিধিমালা-২০১৫, বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন-২০১৮ এবং প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা-২০১৯ প্রণয়ন করেছে। ’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এসব আইনের সফল বাস্তবায়নে যথাযথ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলদেশ অটিজম ও স্নায়ু-বিকাশজনিত সমস্যাবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদের উদ্যোগ, পরামর্শ ও নিরলস প্রচেষ্টায় অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তির জীবনমান উন্নয়নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এনডিডি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় ‘জাতীয় কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা : ২০১৬-২০৩০’ প্রণয়ন করেছি। এর আওতায় অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণকে মাত্রা ও বয়সভিত্তিক জীবনচক্রের বিভিন্ন ধাপে প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্ট অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তির গৃহভিত্তিক পরিচর্যা ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার জন্য মাতা-পিতা ও অভিভাবককে অনলাইন প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। এ ছাড়া এই সুরক্ষা ট্রাস্ট হটলাইনভিত্তিক মেডিকেল সেবা, ডিজিটাল টেলিমেডিসিন সেবা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কারিকুলাম প্রণয়নের কাজ করছে।’
এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্টের আওতায় চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) দেশের ১৪টি স্থানে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ১৪টি ‘অটিজম ও এনডিডি সেবাকেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে অটিজমসহ অন্যান্য এনডিডি শিশু ও ব্যক্তিদেরকে জীবনচক্রের বিভিন্ন ধাপে সোশ্যাল ও মেডিকেল পদ্ধতির সমন্বয়ে মাল্টি ডিসিপি¬নারি টিম দ্বারা আন্তর্জাতিকমানের আর্লি ইন্টারভেনশনসহ ১৭ ধরনের সেবা প্রদান করা হবে। এ কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে সারা দেশে সম্প্রসারণ করা হবে। এ ছাড়া এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিদের জন্য আট বিভাগে ৮টি চিকিৎসা, শিক্ষা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলছে।’