মায়ের নামে মডেল লাইব্রেরি
কুষ্টিয়া পদ্মা-গড়াইয়ের মোহনা থেকে বয়ে আসা ২০-২২ কিলোমিটার দূরে জিকে সেচ খালের পাশে দুটো দোতলা ভবন নিয়ে বিস্তৃত সবুজ মাঠে দাড়িয়ে আছে আজমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যাপীঠের সামনের দিকটার ভবনের নিচতলায় স্থাপিত হয়েছে শাহনুর খাতুন মডেল লাইব্রেরি। ভেতরে ঢুকতেই সরাসরি চোখে পড়ে আলোয় লেখা ‘পড়ি বই, আলোকিত হই’। চারপাশে বিচিত্র বইয়ের সারি, নান্দনিক সজ্জায় সহজেই চোখ আটকে যায়।
এ রকম একটি দৃষ্টিনন্দন আধুনিক পাঠাগার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন এই বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক নাজমুল হুদা। নিজ স্কুলে মায়ের নামে মডেল পাঠাগার প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি কিছুটা স্মৃতিকাতর হয়ে বলেন, ‘দুই যুগ আগে আমরা যখন এই স্কুলে পড়াশোনা করতাম তখন লাইব্রেরি তো দূরের কথা, বই রাখার জন্য এখানে কোনো তাক পর্যন্ত ছিল না। একবার অনেক বই এলোমেলো পড়ে থাকতে দেখে কাউকে না বলে দুটো বই নিয়েছিলাম। পড়ার পর আর ফেরত দেওয়া হয়নি। এত বছর পর আজ নিজের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত লাইব্রেরিতে সেই বই দুটো রাখতে পেরে ভেতরে অন্য এক অনুভূতি কাজ করছে। আশা করি, আমার এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ দেখে অন্যরাও নিজ এলাকায় সামর্থ্য অনুযায়ী পাঠাগার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসবেন, যাতে নতুন প্রজন্ম বইপাঠে আগ্রহী হয়ে ওঠে।’
এলাকার শিক্ষার্থীদের পাঠাভ্যাস তৈরি ও তাদের বইপ্রেমি করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার এই বিদ্যাপীঠে প্রতিষ্ঠিত মডেল লাইব্রেরির উদ্বোধন উপলক্ষে গত ৮ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পৌষের সকালের শীতকে উপেক্ষা করে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক ও সুধীজনের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে ওঠে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা বলেন ‘একটি লাইব্রেরি, যেখানে বৈচিত্র্যময় গ্রন্থের সংগ্রহ থাকে, সেখানে পৃথিবীর সর্বকালের সবপ্রকার অভিজ্ঞতা, বিদ্যা, জ্ঞান এবং আবিষ্কারের সারাংশ সংরক্ষিত থাকে। একটি লাইব্রেরির অতল সমুদ্রে ডুবে থাকে জাতীয় জীবনের বহুবিধ শাখার দিকনির্ণয়ের সমস্ত উপকরণ। মানুষের পরিচয় শুধুমাত্র তার বর্তমান মুহুর্তকে ঘিরে নয়, তার পরিচয় তার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনাকে নিয়ে। এই লাইব্রেরির উদ্যোক্তা নাজমুল হুদা ঠিক তার শেকড়কে মনে রেখেছে। এই প্রত্যন্ত এলাকার একটি স্কুলে এরকম একটি মডেল লাইব্রেরির উদ্যোগ বাংলাদেশের একটি প্রতীকী লাইব্রেরি হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে বলে আমার বিশ্বাস।’
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জনাব আহমেদ জামাল বলেন, ‘এখন অনেকেই বই পড়ে না। কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্ট ফোনে তরুণদের পড়তে দেখা যায়। তবুও বইয়ের কোনো বিকল্প নেই।’
সভাপতির বক্তব্যে মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ কামারুল আরেফিন শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ সবার প্রতি আহ্বান রাখেন, যাতে এই লাইব্রেরিতে নিয়মিত বইপড়া ও জ্ঞানচর্চা চালু থাকে। এ ছাড়া অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে কুষ্টিয়া জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জায়েদুর রহমান, মিরপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জুলফিকার হায়দার, আমলা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কামাল আহমেদ ও প্রধান শিক্ষক আ স ম পারভেজ বক্তব্য দেন।