মা-বাবার কাছেই সংশোধনের সুযোগ পেল অভিযুক্ত ৭০ শিশু
কেউ খেলার ছলে, কেউ বা বন্ধুর সঙ্গে মিশে ছোটখাটো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে চুরি-মারামারির মামলা হওয়ায় আদালতে গিয়ে হাজিরা দিতে হতো। অপরাধী হিসেবে হাজিরা দেওয়ার সময় কোমলমতি শিশুদের যেমন মন খারাপ হতো, অভিভাবকেরাও বিব্রত হতেন। জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে আদালত এমন ৭০ শিশু অভিযুক্তকে সংশোধনের জন্য মা-বাবার জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এবং শিশু আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন আজ সোমবার দুপুরে এমন ব্যতিক্রমী নির্দেশ দিলেন। এ ছাড়া আদালতের নির্দেশে ওই শিশু-কিশোরদের হাতে বাংলাদেশের পতাকা, ফুল আর ডায়েরি তুলে দিলেন আদালতকর্মীরা। আদালতের এমন নির্দেশে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন অভিযুক্ত শিশু ও তাদের অভিভাবকেরা।
প্রবেশন কর্মকর্তা মো. শফিউর রহমান জানান, আদালতের দেওয়া শর্তাবলীর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিদিন কিছু ভালো কাজ করা এবং ডায়েরিতে তা লিখে রাখা, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা, সবার সঙ্গে সদ্ভাব রাখা ও ভালো ব্যবহার করা, মা-বাবাসহ গুরুজনদের আদেশ-নির্দেশ মেনে চলা, মা-বাবার সেবা-যত্ন করা ও কাজে-কর্মে তাঁদের সাহায্য করা, নিয়মিত ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা ও ধর্মকর্ম পালন করা, কমপক্ষে ২০টি করে গাছ লাগানো ও গাছের পরিচর্যা করা, অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা, মাদক থেকে দূরে থাকা এবং ভবিষ্যতে কোনো অপরাধে নিজেকে না জড়ানো। এসব শর্ত প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা, তা প্রবেশন কর্মকর্তা মো. শফিউর রহমান পর্যবেক্ষণ করবেন এবং প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর আদালতকে অবহিত করবেন।
অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিটর (পিপি) হাসান মাহবুব সাদী জানান, এ রায়ের ফলে ছোট-খাট অনেক মামলাই দ্রুত নিষ্পত্তি হলো। শিশুরা তাদের আপন ঠিকানা ফিরে পেল। মা-বাবারর দুশ্চিন্তার অবসান হল। মা-বাবা তাঁদের স্নেহের সন্তানকে নিজের কাছে রেখে সংশোধনের সুযোগ পেলেন। ব্যতিক্রমী রায়ের দিনটি স্মরণীয় ও ইতিহাস হয়ে থাকবে।
একই আদালত এরই মধ্যে তিন দফায় ৯৫ মামলায় ১৩৩ জন শিশুকে প্রবেশন দিয়ে মামলা থেকে নিষ্কৃতির মাধ্যমে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন।