মিয়ানমারের ঘটনায় বিএনপির গভীর উদ্বেগ
গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সংসদ বাতিল করে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের ঘটনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এ নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ মঙ্গলবার একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তন, আইনের শাসন ও মৌলিক মানবাধিকার অগ্রাহ্য করে জনগণের ওপর কর্তৃত্ববাদী শাসনের নির্মম শিকার বাংলাদেশের জনগণের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি মনে করে যে, দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে মিয়ানমারের জনগণ যে গণতান্ত্রিক অধিকার ও শাসনব্যবস্থা অর্জন করেছিল, তা কেড়ে নেওয়া অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিতার রাজনৈতিক সংস্কৃতির অনুপস্থিতি প্রতিবেশী মিয়ানমারের জনগণ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা বাংলাদেশের ভুক্তভোগী জনগণ ভালোভাবেই অনুভব করে বিধায় বাংলাদেশের জনগণ মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অব্যাহত দেখতে চায়।
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কয়েক বছর ধরে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করলেও তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের কোনো ব্যবস্থাই বাংলাদেশ সরকার করতে পারেনি। নতুন এই রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি যাতে আরো দুস্কর কিংবা জটিল না হয়ে পড়ে সে ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর কূটনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে।
গতকাল সোমবার মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ নির্বাচিত সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটক করে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। গত নভেম্বরের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ক্ষমতা দখলে নেয় সেনাবাহিনী। তাদের দাবি, সু চির দল এনএলডি অনিয়ম করে ওই নির্বাচনে একচেটিয়া জয়লাভ করেছে।
সুষ্ঠু নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছেন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে।
সেনানিয়ন্ত্রিত এমডব্লিউডি টেলিভিশনে প্রচারিত জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণায় বলা হয়, গত বছরের ৮ নভেম্বর মিয়ানমারে অনেক দলের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ব্যবহৃত ভোটার তালিকায় ব্যাপক অসামঞ্জস্য ছিল। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন (ইউইসি) বিষয়টির মীমাংসা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের প্রথম দিনেই ক্ষমতাচ্যুত অং সান সু চির সরকারের বেশির ভাগ সদস্যকে বরখাস্ত করে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং বিবিসি বার্মিজ বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, সু চি সরকারের ২৪ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নতুন ১১ জন মন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছে।
নতুন মন্ত্রীদের বেশির ভাগই জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা। কয়েকজন রয়েছেন সেনা সমর্থিত দল ইউএসডিপির সদস্য। ইউএসপিডির অন্যতম নেতা উনা মং লউনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি গত নভেম্বরের নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন।
সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন এমডব্লিউডিতে নতুন এসব নিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়।