মিয়ানমার নিয়ে জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাবে নেই রোহিঙ্গা ইস্যু, ভোট দেয়নি বাংলাদেশ
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মিয়ানমার বিষয়ক গৃহীত প্রস্তাবে রোহিঙ্গা ইস্যু অন্তর্ভুক্ত না করায় গভীর হতাশা ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ। এ কারণে প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থেকেছে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গত শুক্রবার মিয়ানমার বিষয়ে পাস হওয়া প্রস্তাবে দেশটির গণতান্ত্রিক সমস্যা, জরুরি অবস্থা, রাজনৈতিক বন্দি, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও আসিয়ানের কেন্দ্রীয় ভূমিকার প্রতি নজর দেওয়া হয়েছে। তবে রোহিঙ্গা সমস্যা ও প্রত্যাবাসন বিষয়ে যথাযথ নজর দেওয়া হয়নি এবং কীভাবে এই সমস্যা সমাধান করা যাবে সে ব্যাপারেও কিছু বলা হয়নি। গতকাল শনিবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে সে দেশের জনগণের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার এবং সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে গত শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়। ওই প্রস্তাবে ভোট দেয়নি বাংলাদেশ। ভোটদানে বিরত থাকার কারণ ব্যাখ্যায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান এবং প্রত্যাবাসন বিষয়ে কোনো পদক্ষেপের সুপারিশ না থাকায় বাংলাদেশ হতাশ হয়েছে।
এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা সাধারণ পরিষদের বৈঠকে জাতিসংঘের ওই প্রস্তাবের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যা আশা করেছিলাম, এই প্রস্তাব তারচেয়ে কম এবং এই প্রস্তাব একটি ভুল বার্তা দেবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি ব্যর্থ হয়, তবে মিয়ানমার কোনো ধরনের দায়বদ্ধতা অনুভব করবে না।’
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডাসহ জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোর একটি কোর গ্রুপ মিয়ানমার-বিষয়ক প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে। এ ক্ষেত্রে তারা আসিয়ানের সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে। আসিয়ানের সদস্যদেশগুলো সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় মিয়ানমারের সামরিক নেতাসহ এক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিল। ওই সম্মেলনে যে পাঁচ দফা প্রস্তাব সবাই মেনে নিয়েছিল, সেটিকে স্বাগত জানিয়ে বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে সাধারণ পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবে।
এ ছাড়া জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রতি জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। এবং জাতিসংঘের সব সদস্যদেশের প্রতি মিয়ানমারের কাচে অস্ত্র বিক্রি ঠেকাতে কাজ করতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
নিউইয়র্কে গত শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে পাস হওয়া প্রস্তাবের পক্ষে ১১৯টি ভোট পড়ে। বিপক্ষে ভোট দেয় শুধু বেলারুশ। বাংলাদেশ, ভারত, চীন, নেপাল, ভুটান, লাওস, থাইল্যান্ড, রাশিয়াসহ ৩৬টি দেশ ভোট দেয়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে কোনো সুপারিশ করা হয়নি। তাদের ফেরত যাওয়ার জন্য রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করার কথা এবং এই সমস্যা তৈরির মূল কারণের বিষয়েও কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এইব বিষয় বিবেচনা করে ভোটদানে বাংলাদেশ বিরত ছিল। শুধু বাংলাদেশ নয়, ওআইসি, আসিয়ান ও সার্কভুক্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেশও ভোটদানে বিরত ছিল।
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রস্তাবে সাধারণত দেশটির নিজের ভোট বিপক্ষে দেওয়ার কথা থাকলেও জাতিসংঘে দেশটির স্থায়ী প্রতিনিধি কাইউ মোয়ে তুন প্রস্তাবের পক্ষেই ভোট দিয়েছেন। মূলত তিনিই দেশটির সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন।
জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাবে মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিকদের মুক্তি দিতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবটি মিয়ানমার প্রত্যাখ্যান করেছে বলে সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম চ্যানেল নিউজএশিয়া জানিয়েছে। মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাবটি মেনে চলার আইনি বাধ্যবাধকতা নেই এবং এই প্রস্তাব ‘একতরফা অভিযোগ ও ভুল ধারণার’ ভিত্তিতে করা হয়েছে।