মুইন্যা পাহাড়েই সিনহাকে ডাকাত সাব্যস্ত করে হত্যার পরিকল্পনা হয়
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে টেকনাফ শামলাপুর উত্তর মারিশবুনিয়া এলাকার মুইন্যার পাহাড়ে ডাকাত হিসেবে চিহ্নিত করে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছিলেন আসামিরা। সিনহা হত্যা মামলার আসামি পুলিশের সোর্স নুরুল আমিন মোহাম্মদ আয়াজ ও নিজাম উদ্দিন মারিশবুনিয়া উম্মুল কোরান মসজিদের মাইকে মুইন্যা পাহাড়ে ডাকাত এসেছে বলে বার বার ঘোষণা দিলে মসজিদের ইমাম হাফেজ জহিরুল ইসলাম ওই সময় তাদের বাধা দেন এবং জানান যে তারা ডাকাত নয়, তারা সেনাবাহিনীর লোক।
মেজর অব. সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যা মামলার সাক্ষী দিতে গিয়ে আজ মঙ্গলবার কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার দশম সাক্ষী হাফেজ জহিরুল ইসলাম তার জবানবন্দিতে এ কথা জানিয়েছেন।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম আজ সন্ধ্যায় সাংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন।
মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় আজ হাফেজ জহিরুল ইসলাম ছাড়াও ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. রনধীর দেবনাথ আদালতে জবানবন্দি ও সাক্ষী দিয়েছেন।
অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, আদালতে ডা. রনধীর দেবনাথ মেজর অব. সিনহাকে হত্যার পর কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে লাশের ময়নাতদন্ত করেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সিনহাকে হত্যার বিষয়ে আদালতে হুবহু বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
অপরদিকে, আসামি ওসি প্রদীপের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত জানিয়েছেন, সিনহা হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে হত্যার বর্ণনা ও ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মারাত্মক গড়মিল রয়েছে।
আজ এই মামলায় হাফেজ জহিরুল ইসলাম ও ময়নাতদন্তকারী ডা. রনধীর দেবনাথ আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্যগ্রহণের তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় দিন আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শেষ হয়। আগামীকাল ২২ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম। এ নিয়ে এই মামলায় ১১ জন আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন।
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এর আগে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ওসি প্রদীপসহ সিনহা হত্যা মামলার ১৫ আসামিকে আদালতে নিয়ে আসা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তৃতীয় দফায় ১০ নম্বর সাক্ষী হাফেজ জহিরুল ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এ ছাড়া মামলার উপস্থিত অন্য সাক্ষী কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শাহীন আবদুর রহমান, ডা. রনধীর দেবনাথ ও সেনা সদস্য সার্জেন্ট আয়ুব আলীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
এর আগে গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট টানা তিন দিন মামলার প্রথম দফায় ১ নম্বর সাক্ষী ও বাদী শারমিন সাহরিয়া ফেরদৌস ও ২ নম্বর সাক্ষী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। একইভাবে গত ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর টানা চার দিন দ্বিতীয় দফায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেন আদালত। এ পর্যন্ত নয়জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় গত বছর ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় লিয়াকত আলীকে। আদালত মামলার তদন্তভার দেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব)।
ঘটনার ছয় দিন পর ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতসহ সাত পুলিশ সদস্য আত্মসমপর্ণ করেন।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি এবং রামু থানায় আরেকটি মামলা করে। পরে র্যাব পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্বরত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে। সর্বশেষ গত ২৪ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেব।
গত বছর ১৩ ডিসেম্বর র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের তৎকালীন দায়িত্বরত সহকারী পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
গত ২৭ জুন আদালত ১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এতে সাক্ষী করা হয় ৮৩ জনকে।