মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই মুফতি হান্নানের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক নেই : মুন্সী মাহফুজ
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মুন্সী মাহফুজ হাসনাত কামরুল। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কোটালীপাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা মুন্সী আবুল কাশেমের ছোট ছেলে। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের খালাতো ভাই।
মুফতি আবদুল হান্নানের খালাতো ভাই হওয়ার প্রতিবাদে এরই মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন কোটালীপাড়া কৃষক লীগের নেতাকর্মীরা। কমিটির গঠনের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ।
এদিকে কোটালীপাড়া কৃষক লীগের সভাপতি মুন্সী মাহফুজ হাসনাত কামরুল দাবি করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই মুফতি হান্নানের পরিবারের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ২০০০ সালের ২১ জুলাই কোটালীপাড়ায় জনসভার আগে তাঁর জনসভাস্থলের আশেপাশে ৭৬ কেজি ও ৪০ কেজি ওজনের দুটি বোমা পুঁতে রাখে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ। স্থানীয় দোকানি বদিউজ্জামান সরদার পুঁতে রাখা বোমা ঘটনাচক্রে খুঁজে পেলে শুরু হয় তোলপাড়। আর সেনাবাহিনীর একটি দল বোমা দুটি উদ্ধার করে। পরে জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানকে প্রধান আসামি করে মামলা হয়। এই ঘটনায় করা এক মামলায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ১০ জনের এবং আরেক মামলায় ২৩ মার্চ ১৪ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণা করেছেন বিচারিক আদালত। তবে সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় মুফতি হান্নানের আগেই ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এই মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যাচেষ্টার আরও ঘটনায় মুফতি হান্নানের সম্পৃক্ততার তথ্য আছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলায়ও মুফতি হান্নানের সম্পৃক্ততার প্রমাণ উঠে আসে তদন্তে। অভিযোগপত্রে তাকে আসামিও করা হয়। কিন্তু রায়ের আগেই তার ফাঁসি কার্যকর হয়ে যাওয়ায় এই মামলা থেকেও বাদ পড়ে তার নাম।
এদিকে গত ৪ এপ্রিল কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষক লীগের ৭২ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সভাপতি করা হয় মুফতি হান্নানের খালাতো ভাই মুন্সী মাহফুজ হাসনাত কামরুলকে। এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে কমিটি বাতিলের দাবিতে একটি অংশ সংবাদ সম্মেলন করে। এরপর ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে গতকাল ৯ এপ্রিল একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ আশরাফ আলীকে। অন্য সদস্যরা হলেন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহসভাপতি এম এ ওয়াদুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ বিশ্বনাথ সরকার বিটু, সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী ও সদস্য সিরাজুল ইসলাম।
যোগাযোগ করা হলে কোটালীপাড়া কৃষক লীগের নতুন সভাপতি মুন্সী মাহফুজ হাসনাত কামরুল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মুফতি হান্নান আমার খালাতো ভাই। কিন্তু সে আমার বংশের কেউ না। আর মুফতি হান্নানের পরিবারের সঙ্গে আমাদের দ্বন্দ্ব স্বাধীনতা যুদ্ধেরও আগ থেকে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার বাবার ভালো সম্পর্ক ছিল। যার কারণে তিনি আমাদের বাড়িতে সব সময়ই যাতায়াত করতেন। আর এটি ভালোভাবে দেখতেন না আমার খালু মুফতি হান্নানের বাবা। তাই আমার বাবার সঙ্গে তাদের ঝগড়া হতো। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আমার বাবা, ভাইসহ পরিবারের তিনজন মুক্তিযুদ্ধ করেন আর মুফতি হান্নানের বাবা রাজাকারি করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা মুফতি হান্নানের বাবাকে মেরে ফেলে। তখন তারা আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করে আমার বাবা, এক ভাই ও চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে। সে মামলায় আমরা হাইকোর্ট থেকে জামিন পাই। তাই আমি বলব, তাদের সঙ্গে তো আমার পারিবারিক সম্পর্কই নেই বহুদিন ধরে। অথচ আজ আমি অভিযোগের শিকার। তবে সমস্যা নেই, বিষয়টি সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও অবগত আছেন।’
এ বিষয়ে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সমীর চন্দ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কৃষক লীগের কোটালীপাড়ার কমিটির অনুমোদন দিয়েছে জেলা কৃষক লীগ। তবে যে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, তার বিষয়ে আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে ও সেখানকার এক অংশের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এ জন্য আমরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করেছি। কমিটির সদস্যরা দেখবেন যথাযথভাবে গঠনতন্ত্র মেনে এ কমিটি হয়েছে কিনা এবং ঘোষিত কমিটির সদস্যদের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিচয় নিশ্চিত হবেন। আগামী সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট পেয়ে আমরা বাকি ব্যবস্থা নেব।’