মুক্তিযোদ্ধার বসতবাড়ি দখলচেষ্টার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও নওগাঁ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত এম এ রকিবের বসতবাড়ি দখলচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর ছোট মেয়ে তানজিনা শিরিন আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নওগাঁ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।
লিখিত বক্তব্যে সুইডেন প্রবাসী তানজিনা শিরিন বলেন, নওগাঁ পৌরসভার চকদেব ডাক্তারপাড়া এলাকার সরিষাহাটির মোড়ে নওগাঁ পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান এম এ রকিবের বাড়ি দ্বীন মঞ্জিল অবস্থিত। বাড়িটির সঙ্গে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের নানা ইতিহাস জড়িয়ে আছে। দ্বীন মঞ্জিলের উঠানে শিক্ষা, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চর্চা হতো। এসব কারণে দ্বীন মঞ্জিল নওগাঁবাসীর কাছে ঐতিহাসিক বাড়ি হিসেবে পরিচিত। গত ৯ অক্টোবর স্থানীয় প্রভাবশালী কাজী আবু সাঈদের নির্দেশে একদল সন্ত্রাসী ওই বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশ করে বাড়ির কেয়ারটেকার সুবীর প্রামাণিক ও তাঁর পরিবারকে উচ্ছেদ করে। এ সময় তারা বাড়িতে ভাঙচুর চালায় এবং বাড়ির মূল্যবান আসবাবপত্রসহ প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মালামাল লুট করে। এ ঘটনার দুই দিন পর এলাকাবাসীর প্রতিরোধে দখলকারীরা পিছু হটে। এ ব্যাপারে গত সোমবার নওগাঁ জেলা ও জজ আদালত ওই জমির ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তানজিনা শিরিন বলেন, শহরের সরিষাহাটির মোড়ে ৪৪ কাঠা জমির ওপর এম এ রকিবের বসতবাড়ি। পৈতৃক সূত্রে এম এ রকিবের পাঁচ সন্তান ওই সম্পত্তির অংশীদার। তাঁরা তিন ভাই ও দুই বোন। তাঁর বাবার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে এক ভাই ইশতিয়াক আহম্মেদ ও বোন ফাহমিদা জেরিন প্রতারণা করে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে বসতবাড়ির সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টা করেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর বাবা বিষয়টি বুঝতে পেরে ২০০০ সালে আদালতে দলিল রহিতের মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় গত ৯ অক্টোবর স্থানীয় প্রভাবশালী কাজী আবু সাঈদ ক্রয় সূত্রে মালিকানা দাবি করে সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে জোরপূর্বক এম এ রকিবের বসতবাড়ি দখলের চেষ্টা করেন। এলাকাবাসী, থানা পুলিশ ও আদালতের আদেশের ফলে বর্তমানে তারা পিছু হটলেও তাঁদের আশঙ্কা, যেকোনো সময় সন্ত্রাসীরা পুনরায় বিবদমান ওই সম্পত্তি দখল করে নিতে পারে।
তানজিনা শিরিন আরও বলেন, তিনি ও তাঁর দুই ভাই দীর্ঘ দিন ধরে বিদেশে বসবাস করছেন। তাঁদের বিদেশে অবস্থানের সুযোগ নিয়ে দেশে থাকা তাঁর এক ভাই ইশতিয়াক ও বোন ফাহমিদা জাল দলিল করে তাঁদের পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করার চেষ্টা করছেন। ঐতিহাসিক এই বাড়ি ও বসতবাড়ির জমির মূল্য ২০ কোটি টাকারও অধিক।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী আবু সাঈদ বলেন, ‘দ্বীন মঞ্জিলে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তবে সম্পত্তি আমি এম এ রকিবের ছেলে ইশতিয়াক আহম্মেদ ও মেয়ে ফাহমিদা জেরিনের কাছ থেকে কিনেছি। কিন্তু গত ২০ বছর ধরে এম এ রকিবের অন্য ছেলেমেয়েদের বিরোধিতার কারণে সম্পত্তি দখলে পাচ্ছি না। এ বিষয়ে আদালতে মামলা চলছে। আদালতের রায় যেটা আসবে, আমি সেটাই মেনে নেব।’