মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা বেতনের চাকুরে ছিলেন জিয়া : তথ্যমন্ত্রী
তথ্যমন্ত্রী ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস পালন করে না। অথচ তাদের নেতা জিয়াউর রহমান মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা বেতনের চাকুরে ছিলেন।
আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ে সভাকক্ষে মুজিবনগর দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা ও ‘সংবাদ শিরোনামে বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স. ম. গোলাম কিবরিয়া, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. শাহেনুর মিয়া সভায় অংশ নেন।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন বিধায় তিনি শপথ নিতে পারেননি। তাঁর নেতৃত্বেই গঠিত সরকার ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন কুষ্টিয়ার মুজিবনগরে শপথ নিয়েছিল।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম সরকার এই মুজিবনগর সরকারের অধিনেই পুরো মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। এই সরকারের অধিনেই মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।’
‘বিএনপির মুজিবনগর দিবস পালন না করা প্রকারন্তে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে অস্বীকার করা, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে অস্বীকার করা’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘আজকে জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি মুজিবনগর দিবস পালন করে না। অথচ জিয়াউর রহমান এই মুজিবনগর সরকারের অধিনেই একজন চাকুরে ছিলেন এবং ৪০০ টাকা বেতন পেতেন। তবে জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করেছেন না কি পাকিস্তানিদের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করেছেন, সেটি নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ছদ্মাবরণে পাকিস্তানের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করেছেন।'
মন্ত্রী মুজিবনগর দিবসে সাংবাদিকদের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘এদিন শপথ গ্রহণে যাবার জন্য মুজিবনগর সরকারের সদস্যরা এবং সংবাদ সংগ্রহের জন্য দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরা সবাই মধ্যরাতে কলকাতা প্রেসক্লাব থেকে যাত্রা শুরু করেছিল গন্তব্য না জেনেই। পরে সবাই কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলা আম্রকাননে সমবেত হন। সেই জায়গার নামকরণ করা হয় মুজিবনগর। যে সাংবাদিকরা সেদিনকার এই সংবাদ সারা বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছিল, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
মোড়ক উন্মোচিত গ্রন্থ বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘১৯৫২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে সংবাদগুলো পরিবেশিত হয়েছিল, সেগুলো এই বইতে স্থান পেয়েছে। এমন তথ্য সম্বলিত দুর্লভ চিত্র এখানে আছে, যা দেখলে পুরো বইটি পড়তে ইচ্ছে হয়।’
ড. হাছান বলেন, ‘তখনকার দৈনিক আজাদ, ইত্তেফাক, সংবাদ, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক বাংলা, পূর্বদেশ, পিপলস, মনিং স্টার, অবজারভার, বিদেশি পত্রিকার মধ্যে আনন্দবাজার পত্রিকা, হিন্দু,ইভিনিং নিউজ, নিউইয়র্ক টাইমস, টাইমস, জাপান টাইমস, গার্ডিয়ান, ইভিনিং নিউজ, ওয়াশিংটন পোস্টসহ নানা পত্রিকার অংশ বইটিকে সমৃদ্ধ করেছে।’
সচিব মো. মকবুল হোসেন বলেন, ‘১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস জাতির এক উজ্জ্বল স্মরণীয় দিন। এই দিনের ওপর আলোচনা আমাদের মাঝে দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের অনুভবকে শানিত করে।’ সচিব ‘সংবাদ শিরোনামে বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থটি সবাইকে পড়ে দেখার আহ্বান জানান।
সভায় জাফর ওয়াজেদ মুজিবনগর সরকারের পটভূমি ও ইতিহাসের ওপর আলোকপাত করেন। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর সম্পাদিত ও প্রকাশিত ৪৯৬ পৃষ্ঠার ৫০০ টাকা মূল্যের ‘সংবাদ শিরোনামে বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থটিতে বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রায় পাঁচ শতাধিক দেশি-বিদেশি সংবাদ শিরোনামের ছবি ও তথ্য রয়েছে।