মুন্সীগঞ্জে পুলিশ সুপারের ব্যাখ্যার নিন্দা জেলা বিএনপির
মুন্সীগঞ্জে বিএনপির অন্তর্কোন্দলের জেরে যুবদলনেতা শাওনের মৃত্যু ইটের আঘাতে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপারের এমন দাবির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপি ও শাওনের পরিবার। ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা বলে দাবি করেছে জেলা বিএনপি।
পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলনের পর আজ বুধবার বিকেলে পুলিশের দাবির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতন, সদর থানা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর মেয়র এ কে এম ইরাদত হোসেন মানু।
বিএনপির দাবি, পুলিশের গুলিতে যুবদলনেতা শাওন নিহত হয়েছেন। যা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মৃত্যুর সনদে উল্লেখ রয়েছে। গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনা ধামাচাপা দিতেই পুলিশ এখন ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। ওই দিনের ঘটনাকে বিএনপির অন্তর্কোন্দলের কারণে ঘটেনি। পুলিশের অতিউৎসাহের জন্যই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এ প্রসঙ্গে নিহত শাওনের মা লিপি বেগম বলেন, ‘যারা বলছে, আমার ছেলে ইটের আঘাতে মারা গেছে, তারা ওই ভিডিওটি দেখুক। যেখানে গুলির শব্দ হলো, ধোঁয়াও বের হলো, তখনই আমার ছেলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। হাসপাতালের রিপোর্টেও বলা হয়েছে, গুলির আঘাতে শাওন মারা গেছে। অথচ পুলিশ এখন সেই রিপোর্টকে মিথ্যা বলছে।’ এমনকি থানায় গিয়ে ‘গুলিতে নয়, ইটের আঘাতে শাওনের মৃত্যু হয়েছে’ সে বিষয়ে মামলা করতে চাপ দেওয়া হচ্ছে।
এর আগে ঘটনার ছয় দিন পর আজ দুপুর ১২টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও যুবদলনেতা শাওন নিহত হওয়ার ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছে জেলা পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে সংঘর্ষের ঘটনাকে বিএনপির অন্তর্কোন্দল আখ্যা দিয়ে যুবদলনেতা শহীদুল ইসলাম শাওনের মৃত্যু ইটপাটকেলের আঘাতে হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল-মামুন বলেন, ওই দিন বিকেলে পুরাতন ফেরিঘাটে সদর উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির নেতাকর্মীরা অবৈধ অনির্ধারিত সমাবেশ ও ঝটিকা মিছিল বের করে। এ সময় তাদের অন্তর্কোন্দলের জেরে নিজেদের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। তারা শ্রমিক লীগের অফিস ভাঙচুর করলে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টির হয়। এমন পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হলে বিএনপির নেতাকর্মীরা মারমুখি হয়ে ওঠে। এ সময় চারদিক থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। ইটের আঘাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) অন্তত ১৬ পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শর্টগানের রাবার কার্তুজ ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। বিএনপি নেতাকর্মীরা তিন-চারটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ২৪ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ সুপার দাবি করেন, যুবদলের শাওন বিএনপির অপর এক কর্মীর পেছন থেকে ছুড়ে মারা ইটের আঘাতে আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় স্বজনরা তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ২২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে মারা যান।
পুলিশ সুপার উল্লেখ করেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নিহত শাওনের লাশের সুরতহাল সম্পন্ন করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে হস্তান্তর করে। ফরেনসিক বিভাগ শাওনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করতে চূড়ান্ত মতামত প্রদানের ভিসেরা পরীক্ষা করে। তাতে মাথায় আঘাতজনিত কারণেই মৃত্যু হয়েছে বলে মতামত দেওয়া হয়েছে। নিহত শাওনের মাথার পেছনে থেতলানো আঘাত রয়েছে। গান শুটের কোনো আঘাত নেই।
২১ সেপ্টেম্বর মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. কালাম প্রধান বলেন, শাওনকে যখন নিয়ে আসে তখন তাকে রেখে চলে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাতে পাঠানো হয়। কিন্তু ঢাকাতে কে নিয়ে যাবে কেউ ছিল না। পরে পরিবারের স্বজনরা এসে ঢাকায় নিয়ে যায়। তবে তার মাথায় গর্ত হয়ে রক্ত পড়ছিল। সে সময় দেখে বোঝার উপায় নাই কিসের আঘাতে এই ক্ষত।
প্রসঙ্গত, গত ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে জেলা শহরের মুক্তারপুর এলাকার পুরাতন ফেরিঘাটে পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ, সাংবাদিকসহ অন্তত ৮০ জন আহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় যুবদলনেতা শহীদুল ইসলাম শাওন, জাহাঙ্গীর মাদবরসহ তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে ২২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় শাওন সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এ সংঘর্ষের ঘটনায় সদর থানার এসআই মাঈনউদ্দিন ও শ্রমিক লীগের নেতা আব্দুল মালেক বাদী হয়ে বিএনপির দেড়-সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করে পৃথক দুটি মামলা করেন।