মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬৪১, আহত ১৩৬৪
গত মে মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫২৮টি। এতে ৬৪১ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন ১৩৬৪ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৮৪ জন ও শিশু ৯৭ জন।
আজ সোমবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এ প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, ২৪৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৭৯ জন, যা মোট নিহতের ৪৩.৫২ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৬.৭৮ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১১৯ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ১৮.৫৬ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৯১ জন, অর্থাৎ ১৪.১৯ শতাংশ।
এই সময়ে ৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহত হয়েছে এবং ২ জন নিখোঁজ রয়েছে। ১৩টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত এবং ৩ জন আহত হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্টনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২১৭টি (৪১.০৯%) জাতীয় মহাসড়কে, ১৯১টি (৩৬.১৭%) আঞ্চলিক সড়কে, ৭৪টি (১৪%) গ্রামীণ সড়কে এবং ৪৬টি (৮.৭১%) শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন
দুর্ঘটনাসমূহের ১১১টি (২১.০২%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২১৪টি (৪০.৫৩%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১২৩টি (২৩.২৯%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৬১টি (১১.৫৫%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৯টি (৩.৫৯%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৯১৪টি। (ট্রাক ১৫২, বাস ১৪৬, কাভার্ডভ্যান ১৯, পিকআপ ৩৯, ট্রলি ৮, লরি ৪, ট্রাক্টর ১৪, তেলবাহী ট্যাঙ্কার ১, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ১, মাইক্রোবাস ১৮, প্রাইভেটকার ১৩, অ্যাম্বুলেন্স ৪, জিপ ৬, পুলিশ পিকআপ ১, মোটরসাইকেল ২৬৭, থ্রি-হুইলার ১৪৪ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-লেগুনা-টেম্পু), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৩৩ (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-টমটম), বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-প্যাডেল ভ্যান ৩৫ এবং অন্যান্য ৯টি (পাওয়ারটিলার-ধানমাড়াইয়ের মেশিন গাড়ি-ডাম্পার-ক্রেনগাড়ি-ট্রেন)।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৫.৩০%, সকালে ২৯.৩৫%, দুপুরে ২২.৫৩%, বিকেলে ১৭.৮০%, সন্ধ্যায় ১১.১৭% এবং রাতে ১৩.৮২%।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৪.০৫%, প্রাণহানি ২৪.৮০%, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৬.০৯%, প্রাণহানি ১৮.০৯%, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ২১.৭৮%, প্রাণহানি ২০.১২%, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১২.৫%, প্রাণহানি ১১.৭০%, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.৯৫%, প্রাণহানি ৮.৭৩%, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৪.১৬%, প্রাণহানি ৩.৫৮%, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.৫৭%, প্রাণহানি ৭.৮০% এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.৮৭%, প্রাণহানি ৫.১৪% ঘটেছে।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১২৭টি দুর্ঘটনায় ১৫৯ জন নিহত। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ২২টি দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৩২টি দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত। সবচেয়ে কম ঝালকাঠি জেলায়। তিনটি দুর্ঘটনায় ২ জন আহত। কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। রাজধানী ঢাকায় ২৩টি দুর্ঘটনায় ২৬ জন নিহত হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় গত মে মাসে প্রতিদিন গড়ে ২০.৬৭ জন নিহত হয়েছে। এপ্রিল মাসে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছিল ১৮ জন। এই হিসাবে এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে প্রাণহানি বেড়েছে ১৪.১৯ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৪৮৯ জন অর্থাৎ ৭৬.২৮ শতাংশ।