মোংলায় কাগজে-কলমে ‘কঠোর বিধিনিষেধ’, বাস্তবায়নে ভিন্ন চিত্র
মোংলায় কঠোর বিধিনিষেধ জারি থাকলেও এর বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না। বরং চোখে পড়ছে ভিন্ন চিত্র। এর আগে মোংলায় গত বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর থেকেও অধিক কঠোরতর বিধিনিষেধ জারি করে বাগেরহাট জেলা প্রশাসন।
নতুন করে জারি করা গণবিজ্ঞপ্তিতে নদী পারাপারের খেয়া ট্রলার, দোকানপাট ও যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আজ শনিবার সকাল থেকে নদী পারাপারের ঘাটে দেখা গেছে মোংলা ইপিজেড ও দিগরাজ শিল্প এলাকার কলকারখানার নারী-পুরুষ কর্মজীবী মানুষের ব্যাপক ভিড়। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাদাগাদি করে শত শত মানুষ সংক্রমণ ঝুঁকি মাথায় নিয়ে নদী পার হচ্ছে। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে পৌর শহরের ওপর দিয়ে বন্দরের শিল্প এলাকায় যাতায়াত করছেন তাঁরা। মোংলা-খুলনা মহাসড়কে চলছে সব ধরনের যানবাহন। কোথাও বিধিনিষেধের বালাই নেই।
এ ছাড়া পৌর শহরের প্রধান কাঁচাবাজার, মাছ ও মাংসের দোকান খোলা মাঠে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসানোর নির্দেশ রয়েছে। সেই নির্দেশও কার্যকর করা হয়নি। পশুর হাট বন্ধ থাকলেও মাংস ও গরু ব্যবসায়ীরা অন্য উপজেলার হাট থেকে পশু কিনে আনছেন। সীমান্তবর্তী চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, যশোর ও রাজশাহী থেকে পৌর শহরের বাজারে প্রতিনিয়ত আসছে আম, কাঁঠাল, আনারসসহ মৌসুমি ফল। সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে যে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় সেই ঝুঁকি রয়েই গেছে।
বিধিনিষেধে শুধু ওষুধ, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানপাট খোলা থাকার কথা থাকলেও মূলত খোলা রয়েছে সব ধরনের দোকানপাট। জনসমাগম ও যান চলাচলও করছে সমান তালে। তাই এই এলাকায় কমছে না করোনার সংক্রমণ ও শনাক্তের হার।
আজ শনিবার সকাল ১০টার পর থেকে কয়েকটি মোড়ে পুলিশ, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবকদের দেখা গেলেও তাঁদের সামনে দিয়ে যানবাহন ও সাধারণ মানুষের রয়েছে অবাধ চলাচল। পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলার মতো করে খুলছে দোকানপাট।
হঠাৎ করে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ৩০ মে থেকে মোংলায় প্রথম দফায় এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। পরিস্থিতি অনুকূলে না আসায় দ্বিতীয় দফায় বিধিনিষেধ বাড়ানো হয়। এতেও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার ভোর থেকে আগামী বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত জারি করা হয় কঠোর থেকে অধিক কঠোরতর বিধিনিষেধ।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জীবিতেশ বিশ্বাস বলেন, ‘বাগেরহাট ও মোংলায় বিভিন্ন মিটিংয়ে বিধিনিষেধ কড়াকড়িভাবে বাস্তবায়নের জন্য একাধিকবার বলার পরও তা ঢিলেঢালাভাবে চলছে। প্রশাসনও চেষ্টা করছে, কিন্তু সাধারণ মানুষ তা মানছে না।’
ডা. জীবিতেশ আরও জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে আজ শনিবার মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন রোগী ভর্তি রয়েছে। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে পাঁচজন।
মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ১ জুন থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ১০ দিনে উপজেলায় মোট ৩২০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে আক্রান্ত ২০৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৬৫ শতাংশ।
এদিকে, আজ শনিবার দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে মাঠে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নয়ন কুমার রাজবংশী বলেন, ‘লোকজন যাতে অপ্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের না হয়, সেজন্য তাদের সচেতন করা হচ্ছে। তারপরও যারা বিধিনিষেধ ভঙ্গ করে দোকানপাট খুলছে, যানবাহন চালাচ্ছে ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলাচল করছে, তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে অভিযান চালিয়ে ৫০টি মামলায় দেড়শ জনকে জরিমানা করা হয়েছে।’