মোংলায় স্বামী-দেবরকে বাঁচাতে গিয়ে গৃহবধূ যৌন হয়রানির শিকার
মোংলায় ইউপি মেম্বারপুত্রের টর্চার সেলে আটকে রেখে আপন দুই ভাইকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে নির্যাতিতদের উদ্ধারে করতে গিয়ে নারীসহ আরও তিনজন পুনরায় হামলার শিকার হয়েছেন। গুরুতর আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
আজ শনিবার সকালে উপজেলার কানাইনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গ্রামের সংখ্যালঘুদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানায়, সালিশ বিচারের নামে আজ সকাল ১০টার দিকে পৌর শহরের বাংলাদেশ হোটেলের সামনে থেকে বিনোদ সরকার (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে জোরপূর্বক তুলে নেয় চাঁদপাই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার সুলতান হাওলাদারের ছেলে জাকির ও তার দলবল। সেখান থেকে তাকে শহরের সিঙ্গাপুর মার্কেট সংলগ্ন একটি কক্ষে আটকে রেখে বেধড়ক মারধরসহ শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে হাত ও পা বেঁধে টেনেহিঁচড়ে নেওয়া হয় কানাইনগর এলাকায়। কানাইনগর গুচ্ছগ্রাম এলাকায় অপর একটি ঘরে বন্দি করে রাখা হয় তাকে। সেখানেও মেম্বার পুত্র ও তার লাঠিয়াল বাহিনী দ্বিতীয় দফায় নির্যাতন ও মারধর করে তাকে।
এ খবর জেনে ঘটনাস্থলে পৌঁছান বিনোদের ছোট ভাই বিপ্লব সরকার (৩৮)। এ সময় তাকেও বন্দি করা হয় মেম্বারপুত্রের টর্চার সেলে। সেখানে দুই ভাইকে আটকে রেখে উলঙ্গ করে মারধর ও নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে দুই ভাই বন্দি ঘরে নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের অবস্থা বেগতিক দেখে সুলতান মেম্বার প্রতিবেশী ওয়ার্ডের মেম্বার মোল্লা কামরুল ইসলামকে বন্দি ব্যক্তিদ্বয়কে জিম্মায় নেওয়ার কথা বলেন। পরে মেম্বার মোল্লা কামরুল ইসলাম দুপুর ১টার দিকে বিনোদের স্ত্রী বিপাশা (৩০) ও তার বৃদ্ধ মা গীতা সরকারসহ প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তাদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে রাস্তার উপর আবারও নির্যাতন চালানো হয়। ওই নির্যাতনের দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে স্বামী ও দেবরকে রক্ষায় স্ত্রী বিপাশা এগিয়ে গেলে তিনিও যৌন হয়রানিসহ নির্যাতনের শিকার হন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রকাশ্যে নির্যাতন দেখে পথচারী মানিক ও শুভ ছাড়াতে গিয়ে মেম্বারপুত্রের লাঠিয়াল বাহিনীর হামলার শিকার হন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পরে স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের উদ্ধার করে দুপুর ২টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে আপন দুই ভাই বিনোদ ও বিপ্লব সরকারের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এ ঘটনায় আজ বিকেলে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন নির্যাতিত বিনোদের বড় ভাই কুমোদ সরকার।
উল্লেখ্য, ৯৯৯-এ কল পেয়ে পুলিশ কয়েকদিন আগে কানাইনগর এলাকার এক যুবতীর ঘর থেকে গভীর রাতে সুলতান মেম্বারের ছেলে জাকিরকে আটক করে।
এ বিষয়ে মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজ খবর নিয়েছে। ইউপি মেম্বার সুলতান ও তার ছেলে জাকিরের নেতৃত্বাধীন একটি গ্রুপ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।