‘মৎস্যজীবীদের হাতে জাল নেই, জলাও নেই’
মৎস্যজীবীদের হাতে জাল নেই, জলাও নেই—বলে মন্তব্য করেছেন সাতক্ষীরা জেলা ভূমি কমিটি আয়োজিত কর্মশালার বক্তারা।
আজ বুধবার চায়না-বাংলা মিলনায়তনে বেসরকারি সংস্থা উত্তরণের সহযোগিতায় ‘সরকারি জলমহাল নীতিমালা ২০০৯ সমস্যা, সম্ভাবনা ও মৎস্যজীবীদের পক্ষে সাংবাদিক, সুশীলসমাজের করণীয়’ শীর্ষক এ কর্মশালার আয়োজন করে সাতক্ষীরা জেলা ভূমি কমিটি।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, প্রাকৃতিক জলমহালগুলো মৎস্যজীবীদের হাতে না থাকায় বাংলাদেশ মৎস্য উৎপাদনে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারছে না। ‘জাল যার, জলা তার’ সরকারের এই নীতি বাস্তবায়িত না হওয়ায় দেশের মৎস্যজীবীরা তাদের পেশা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে বৈরী প্রভাব পড়ছে।
বক্তারা বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী মৎস্যজীবীদের হাতের জলমহাল যাবার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। প্রভাবশালী ও অর্থ-বিত্তশালীরা নিজেদের মৎস্যজীবী সাজিয়ে এসব জলমহাল ভোগদখল করছে। ফলে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা পেশা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।
কর্মশালায় এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়, দেশে মোট জলমহালের সংখ্যা ২৬২৭৫টি। এর মধ্যে ২০ একরের উপরে খুলনা জেলায় জলমহাল রয়েছে ১৬১টি এবং সাতক্ষীরা জেলায় ৪০টি। সাতক্ষীরায় ২০ একর পর্যন্ত জলমহাল রয়েছে ৩৪৯টি। দেশে ১৪ লাখেরও বেশি পেশাজীবীকে মৎস্যজীবী কার্ড দিয়েছে সরকার। এরও বেশি সংখ্যক মৎস্যজীবী কার্ডের আওতার বাইরে রয়ে গেছে। তাদের হাতে মৎস্যজীবী পরিচয়পত্র তুলে দেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশে মৎস্যজীবীর সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি উল্লেখ করে বক্তারা আরও বলেন, সাতক্ষীরায় নিবন্ধিত মৎস্যজীবী রয়েছে ৫০ হাজার। নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে এমন মৎস্যজীবীর সংখ্যা অনেক। তবে তাদের হাতে এসব জলমহালের সামান্য অংশই রয়েছে বলে কর্মশালায় উল্লেখ করা হয়।
বক্তারা বলেন, ছোটবড় সমবায় সমিতি গঠন করে এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে মৎস্যজীবীরা নিয়ম অনুযায়ী এসব জলমহাল ভোগ করতে আগ্রহী। তারা এসব প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ এবং মৎস্য উৎপাদন করে সরকারকেও বেশিমাত্রায় রাজস্ব দিতে পারবে। অথচ বিভিন্ন কারণে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা পিছিয়ে পড়ায় সুযোগ নিচ্ছে মৎস্য ব্যবসায়ীরা। তারা মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে সরকারের কাছ থেকে জলমহাল বন্দোবস্ত নিয়ে নিজেদের মতো করে মাছ চাষ করছে। অপরদিকে যেসব মৎস্যজীবী তাদের সমিতির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নিয়ে মাছ উৎপাদন করছে, তারা নানা ধরনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সংকট এমনকি মামলার জটে আটকে পড়ছে।
মৎস্যজীবীদের এই জট থেকে বের করে এনে মৎস্য উৎপাদনে সহযোগিতা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে কর্মশালায় বলা হয়, সরকারের ‘জাল যার, জলা তার’ এই নীতি বাস্তবায়নে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
জেলা ভূমি কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী সমিতির সহসভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম, অ্যাডভোকেট আজাদ হোসেন বেলাল, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মনিরুল ইসলাম মিনি, সাংবাদিক শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন, আমিনুর রশীদ। আরও বক্তব্য দেন মৎস্যজীবী রবিন মণ্ডল, লক্ষ্মণ কুমার মণ্ডল।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন উত্তরণের মো. মনিরুজ্জামান জমাদ্দার।