যাত্রীর সঙ্গে বাস শ্রমিকদের তর্ক, জানালা দিয়ে ‘ছুড়ে ফেলা হয়’ শিশুকে
সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে যাত্রী নেওয়ার প্রতিবাদ করায় একই পরিবারের চারজনকে বাস শ্রমিকেরা বেধড়ক মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বরিশাল নগরীর রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মারধরের শিকার ওই পরিবারের সঙ্গে থাকা সাত বছরের এক শিশুকে বাসের জানালা থেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রূপাতলী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন জানান, বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীর সঙ্গে তর্কাতর্কি হলেও স্ট্যান্ডের বাইরের সড়কে ওই বাসের শ্রমিকেরা তাদের মারধর করেছেন।
কাওছার হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি ঘটিয়েছেন ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির শ্রমিকেরা। আপনারা জানেন, তাদের কাছে বরিশালবাসী এক ধরনের জিম্মি। এ ঘটনার বিষয়ে ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির নেতাদের জানাতে পারব, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নিতে পারব না। ব্যবস্থা নিতে গেলে ঝালকাঠি মালিক সমিতি রূপাতলী থেকে বাস সরিয়ে নিয়ে ঝালকাঠির কালিজিরায় স্ট্যাড করে। সেই সঙ্গে ঝালকাঠিতে বরিশালের বাস ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়।’
মারধরের শিকার চারজন হলেন, মঠবাড়িয়া উপজেলার টিকিকাটা গ্রামের মৃত নূর মোহাম্মদ সিকদারের ছেলে শামীম সিকদার (২৭), তাঁর মা হাসনুর বেগম (৫৫), ভাগ্নের স্ত্রী কারিমা ও কারিমার মেয়ে মুনিয়া (৭)।
শামীম সিকদারের অভিযোগ, নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কালিজিরায় বসবাস করলেও তাঁর বাড়ি মঠবাড়িয়ায়। শুক্রবার মঠবাড়িয়ায় যাচ্ছিলেন তারা। তিনি বলেন, ‘সাধারণ সময়ে বরিশাল থেকে মঠবাড়িয়ায় ভাড়া ১৫০ টাকা। কিন্তু, করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চলাচল করায় সরকার নির্ধারিত ২৪০ টাকা করে ভাড়া আদায় করা হয়। আমরা চারজনই ২৪০ টাকা করে টিকেট নিয়ে সিটে বসেছিলাম। নিয়ম হচ্ছে, এক সিট খালি রাখা। কিন্তু, ওই বাসটির সুপারভাইজার এক সিট তো ফাঁকা রাখছেনই না, বরং আরও যাত্রী তুলছিলেন। আমি প্রতিবাদ করলে বাসের সুপারভাইজার, হেলপারসহ বাসস্ট্যান্ডের ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক মিলে বাসের সিটেই আমাকে মারধর করেন। আমাকে বাঁচাতে গেলে শ্রমিকেরা আমার মা ও ভাগ্নের স্ত্রী কারিমাকে মারধর করেন। এ ছাড়া আমার ভাগ্নের সাত বছরের মেয়ে মুনিয়াকে জানালা থেকে ছুড়ে নিচে ফেলে দেন।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির মাহিম পরিবহণের সুপারভাইজার মুন্নার নেতৃত্বে ওই যাত্রীদের ব্যাপক মারধর করা হয়। যাত্রী মারধরে শুধু ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির শ্রমিকেরাই নন, রূপাতলী বাস মালিক সমিতির শ্রমিকেরাও অংশ নেন। ওই যাত্রীকে সপরিবারে মারধরের পর বাসটি স্ট্যান্ড ছেড়ে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী নিয়ে মঠবাড়িয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
অভিযোগ উঠেছে, শুধু মাহিম পরিবহণ নয়, বরিশালের অভ্যন্তরীণ সব রুটে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে বাসগুলো চলাচল করে। প্রশাসনিক কোনো নজরদারি না থাকায় বাস মালিক ও শ্রমিকেরা ঐক্যবদ্ধভাবে এভাবে যাত্রী পরবিহণ করছেন। এর প্রতিবাদ করলে যাত্রীদের মারধর করা হয়।
এ বিষয়ে রূপাতলী বাস মালিক সমিতির লাইনবিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন শামীম বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনেছি এবং মারধরের শিকার যাত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।’
এ বিষয়ে ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।