যুবককে গাছে ঝুলিয়ে পেটালেন যুবলীগনেতা
গাজীপুরের শ্রীপুরে চুরির অভিযোগে গাছে ঝুলিয়ে এক যুবককে বেদম পিটিয়েছে কয়েকজন যুবক। টাকা চুরির অভিযোগে তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে অমানবিক এ নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে যুবলীগনেতা আবদুল কাইয়ুম ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়নের দমদমা গ্রামে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) এ বর্বর নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।
পরে রাতেই গুরুতর আহত অবস্থায় নির্যাতনের শিকার যুবককে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো কোনো অভিযোগ পায়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
এ সময় শতাধিক মানুষ দাঁড়িয়ে এ মারধর প্রত্যক্ষ করলেও নির্যাতনকারীদের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি যুবককে রক্ষা করতে। বেধড়ক মারধরের ভিডিওর একাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। নির্যাতনে শিকার যুবকের নাম আরিফুল ইসলাম খান (২৮)। তিনি ওই গ্রামের উসমান আলী খানের ছেলে। তাঁকে টাকা চুরির অভিযোগে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে যুবলীগনেতা আবদুল কাইয়ুম ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এ সময় তাঁদের ভয়ে কেউ উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, গতকাল সকালে আরিফকে বাড়ি থেকে ধরে আনেন কাইয়ুম ও তাঁর লোকজন। এর আগে এলাকায় এক ডাক্তারের বাংলো বাড়ির পাশে রাখা একটি প্রাইভেট কারের গ্লাস ভেঙে টাকা চুরি হয়। এ চুরির দায় পড়ে তাঁর ওপর। পরে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় টাকা চুরির ব্যাপারে। এ সময় তিনি টাকা চুরি করেননি বলে জানান। কিন্তু এর পরও তাঁকে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে বেধড়ক পেটান কাইয়ুম ও তাঁর লোকজন। এ সময় আরিফ উচ্চ স্বরে কান্না করে হাতে-পায়ে ধরলেও তাঁদের কোনো মায়া হয়নি। চলে বেদম মারধর। থেমে থেমে কয়েক দফা তাঁকে বেদম পেটানো হয়। এক সময় আরিফ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ সময় শতাধিক মানুষ এ মারধরের ঘটনা দেখলেও কেউ নির্যাতনকারীদের ভয়ে আরিফকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেননি। পরে নির্যাতনকারীরা চলে গেলে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আরিফের স্বজনরা জানান, ঘটনার দিন আরিফ বাড়িতে শুয়ে ছিলেন। এ সময় কিছু লোক এসে তাঁকে নিয়ে যান। পরে কাছেই খান বাড়ির কাঁঠালবাগানে নিয়ে চুরি ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় আরিফ অভিযোগ অস্বীকার করেন। কিন্তু তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেদম মারধর করেন। তাঁরা এগিয়ে গেলে তাঁদেরও মারধরের হুমকি দেন। মারধরের একটি ভিডিও ভাইরাল হলে নির্যাতনকারীরা গা-ঢাকা দিয়েছেন।
আরিফের বাবা উসমান আলী খান বলেন, ‘আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি। বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বিনা অপরাধে গাছে ঝুলিয়ে আমার ছেলেকে বেদম পিটিয়েছে। আমার ছেলের দুটি পা মনে হয় ভেঙে গেছে। এমন অমানবিক নির্যাতনের বিচার চাই। আমার ছেলে অপরাধী হলে আইনের মাধ্যমে বিচার হবে। কিন্তু আইন না মেনে এমন মারধর কেন করা হলো? এ কেমন অবিচার! বিনা দোষে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ইচ্ছেমতো মারধর করা!’
প্রহলাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য জাকির হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন ‘চুরির অভিযোগে আরিফকে মারধর করা হয়েছে—এমন খবর আমার কাছে তাঁর স্বজনরা জানিয়েছেন। আহত আরিফকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁর চিকিৎসা চলছে। বিষয়টি পুলিশকে জানানোর জন্য তার স্বজনদের বলা হয়েছে।’
এ ঘটনায় অভিযুক্ত প্রহলাদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবদুল কাইয়ুমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুর রহমান বলেন, ‘এমন কোনো খবর আমরা এখনও পাইনি। তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর। আমরা গুরুত্ব দিয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। এমন জরুরি প্রয়োজনে জাতীয় সেবা ৯৯৯-এ যোগাযোগ করলে দ্রুত সহযোগিতা করা যেত।’