যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তী আজ
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আজ শুক্রবার মহাসমাবেশ করবে সংগঠনটি। সংগঠনের পক্ষ থেকে মনে করা হচ্ছে, ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০ লাখ নেতাকর্মীর সমাগম হবে। সমাবেশ ঘিরে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সমাবেশস্থলে প্রবেশের গেট ও রুট নির্ধারণ করে দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এ ছাড়া মহাসমাবেশে আসা গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও থাকছে। এই মহাসমাবেশে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।
যুবলীগের প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি ও সুবর্ণজয়ন্তী নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ ফজলে শামস পরশ বলেছিলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এই মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে রচিত হবে স্বাধীনতাবিরোধীদের জন্য ইস্পাত কঠিন ভিত্তি, যা বিএনপি-জামায়াতের কাছে অজেয়, দুর্লঙ্ঘনীয়। আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত যদি দেশের সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি করার চেষ্টা করে, তাহলে রাজপথেই তাদের সমুচিত জবাব দেবে যুবলীগ। ১১ নভেম্বরের যুব মহাসমাবেশের পর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি আর মাথাচাড়া দিতে সক্ষম হবে না। এ সমাবেশ হবে তারুণ্য, সাহসের ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে।’
সমাবেশস্থলে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে যুবলীগ চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘সমাবেশ সফল করতে ১০টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য পাঁচটি গেট রাখা হবে।’
যুব মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করছেন যুবলীগের নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ সারা দেশে জেলা, থানা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নেতাকর্মীদের সমাবেশকে শতভাগ সফল করতে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়। উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগ নেতাকর্মীদের জন্য টি-শার্ট ও লাল-সবুজ রঙের ক্যাপ পরিধানের জন্য নিদের্শনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভাগ অনুযায়ী নেতাকর্মীরা বিভিন্ন রঙের টি-শার্ট ও ক্যাপ পরিধান করে সমাবেশে উপস্থিত হবেন আজ।
মঞ্চ তৈরি
যুব সমাবেশের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকার আদলে। মঞ্চের পেছনে ব্যানারে থাকবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবির সঙ্গে পদ্মা সেতু মেগাপ্রকল্পর ছবি।
সমাবেশ ঘিরে কড়া নিরাপত্তা
যুব সমাবেশ ঘিরে কড়া নিরাপত্তা বলয় থাকবে সমাবেশের আশপাশের এলাকা। কেউ যদি কোনো বিশৃঙ্খলা করে, তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হবে। এছাড়া সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবীরা দায়িত্বে থাকবেন। বিশাল এ জনসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। আর তাই মহাসমাবেশে যেন কোনো ধরনের নাশকতা না ঘটে, সেজন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নজরদারি করছে বলে জানা গেছে।
সমাবেশস্থলে প্রবেশের গেট ও রুট নির্ধারণ
যুব মহাসমাবেশে যে রুট ধরে আসতে হবে তা নির্ধারণ করেছে যুবলীগ। সারা দেশ থেকে তাদের নেতাকর্মীরা কোন গেট ও রুট দিয়ে সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করবে তার বিস্তারিত তথ্য সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। তিনি বলেন, ভিআইপি গেট বাদে সমাবেশে প্রবেশের গেট থাকবে পাঁচটি। এগুলো হলো- টিএসসির রাজু ভাস্কর্য সংলগ্ন গেট, মেট্রোরেল স্টেশন গেট, রমনা কালী মন্দির গেট, মেট্রোরেল গেট-১ (মাজার গেটের পরের গেট) এবং মাজার গেট।
সমাবেশে প্রবেশের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সবুজ কার্ডধারী অতিথিরা ৩ নম্বর গেট (রমনা কালী মন্দির গেট) দিয়ে প্রবেশ করবেন।
রংপুর বিভাগ, রাজশাহী বিভাগ, ময়মনসিংহ বিভাগ ও ঢাকা মহানগর উত্তর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা জেলা উত্তরের নেতাকর্মীরা প্রবেশ করবেন ১ ও ২ নম্বর গেট দিয়ে।
বৃহত্তর ফরিদপুর, খুলনা বিভাগ, বরিশাল বিভাগ, সিলেট বিভাগ, চট্টগ্রাম বিভাগ, ঢাকা জেলা দক্ষিণ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের নেতাকর্মীরা প্রবেশ করবেন ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গেট দিয়ে।
যুবলীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৃহত্তর ফরিদপুর ও খুলনা বিভাগ থেকে যারা পদ্মা সেতু হয়ে মহাসমাবেশে আসবেন, তারা হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে না এসে বাবুবাজার ব্রিজ হয়ে আসবেন। কারণ, সিলেট বিভাগ, চট্টগ্রাম বিভাগ, বৃহত্তর ফরিদপুর ও খুলনা বিভাগের নেতাকর্মী একই সঙ্গে হানিফ ফ্লাইওভার ব্যবহার করলে টোল প্লাজায় দীর্ঘ লাইন পড়ে যেতে পারে।
সাংবাদিকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা মোতাবেক ভিআইপি গেট, অর্থাৎ শিখা চিরন্তন গেট দিয়ে প্রবেশ করবেন।
বিভিন্ন জেলা থেকে গাড়ি আসার রুট
চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে গুলিস্তান, জিরো পয়েন্ট, হাইকোর্ট, দোয়েল চত্বর, শহীদ মিনার, পলাশী হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
বৃহত্তর ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল বিভাগ (যারা বাসে আসবেন) পদ্মা সেতু হয়ে বাবুবাজার ব্রিজ দিয়ে গুলিস্তান, নগর ভবনের সামনের রাস্তা, বঙ্গবাজার সংলগ্ন রাস্তাসমূহ এবং জিরো পয়েন্ট ওসমানী উদ্যান সংলগ্ন এলাকা।
ময়মনসিংহ বিভাগ মহাখালী, মগবাজার ফ্লাইওভার, কাকরাইল চার্চের বামে মোড় সংলগ্ন রাস্তা হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ গাবতলী, মিরপুর রোড, সায়েন্সল্যাব ক্রসিং, নিউমার্কেট ক্রসিং, বামে মোড়; অথবা গাবতলী, মিরপুর রোড সায়েন্সল্যাব ক্রসিং বামে মোড়, কাঁটাবন ক্রসিং ডানে মোড়, নীলক্ষেত ক্রসিং, পলাশী ক্রসিং হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
ডিএমপির নির্দেশনা
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুক্রবার যুব মহাসমাবেশ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশেপাশের এলাকার কিছু রাস্তা বন্ধ বা রোড ডাইভারশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। এ ছাড়া, সমাবেশে আসা গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ শাখা থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কাঁটাবন ক্রসিং, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং, পুলিশ ভবন ক্রসিং, কাকরাইল চার্চ ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ক্রসিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার, জগন্নাথ হল ক্রসিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভাস্কর্য ক্রসিং ও উপাচার্য ভবন ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এ অবস্থায় সম্মানিত নগরবাসীকে উল্লিখিত শুক্রবার ওইসব এলাকা বা সড়কগুলো পরিহার করে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
মহাসমাবেশে আসা গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা যে এলাকায়
মহসিন হল মাঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ভিআইপি); মলচত্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; পলাশী ক্রসিং থেকে ভাস্কর্য ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে; ফুলার রোড রাস্তার দুই পাশে; দোয়েল চত্বর ক্রসিং থেকে শহিদুল্লাহ হল ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে; পলাশী ক্রসিং থেকে নীলক্ষেত ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে; সবজি বাগান থেকে নেভাল গ্যাপ পর্যন্ত; সুগন্ধা থেকে অফিসার্স ক্লাব ক্রসিং পর্যন্ত; হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল গলি; নেভাল গেইট এলাকা; হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বিপরীত পাশে; মিন্টো রোড ক্রসিং থেকে পুলিশ ভবন ক্রসিং ও দিলকুশা ও মতিঝিল এলাকার রাস্তার দুই পাশে গাড়ি পার্কিং করার ব্যবস্থা থাকবে।