রঙে রঙিন দেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগান
ঋতুরাজ মানে শুকনো ঝরা পাতার খেলা আর ফুটন্ত ফুলের মেলা। পঞ্জিকার পাতায় শীত পেরুতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। প্রকৃতিতেও তাই অন্য সুর। এই সুরে তাল মিলিয়ে একটু আগেভাগে গাইছে বসন্তের কোকিল।
বসন্ত এলেই রক্তিম আভায় ফুলে ফুলে ভরে ওঠে দেশের সবচেয়ে বড় সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের শিমুল বাগান। এবারও প্রকৃতি তার মনের মাধুরী মিশিয়ে ফুলের লাল রঙে সাজিয়েছে এই বাগন। যেদিক চোখ যায়, লালে লাল শিমুলের ডাল। শিমুল বাগানের এ সৌন্দর্য দেখতে ফাগুনের শুরুতেই ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। দেশের সবচেয়ে বড় এই শিমুল বাগান ইতোমধ্যে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশি পর্যটকদেরও নজর কেড়েছে।
ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, মাঝে সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ যাদুকাটা নদী আর এপারে শিমুল বাগান। সব মিলেমিশে গড়ে তুলেছে প্রকৃতির এক অনবদ্য কাব্য। লাল পাপড়ি মেলে থাকা রক্তিম আভায় যেন পর্যটকদের মনে আলাদাভাবে স্থান করে নিয়েছে।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মানিগাঁওয়ে ২০০০ সালে ১০০ বিঘা জমির মধ্যে তিন হাজার শিমুল গাছ লাগিয়ে এ বাগানটি গড়ে তুলেন বাধাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন। বর্তমানে তার ছেলে-মেয়েরা এই বাগানটির দেখাশুনা করছেন।
দেশি-বিদেশি পর্যটক মিলে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার লোকের সমাগম হয় বাগানে। জনপ্রতি ২০ টাকা করে টিকেট কেটে বাগানে প্রবেশ করতে হয়। দলে দলে পর্যটকরা আসছেন বসন্তের শিমুল রঙে মনকে রাঙিয়ে নিতে। কেউ আসছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কেউ বা আসছেন বন্ধু বান্ধব বা প্রিয় মানুষকে নিয়ে।
সাম্প্রতিক সময়ে এখানে নতুন করে আরও এক হাজার ৫০০ চারা রোপণ করেছেন তারা। এ ছাড়া সময়ের পরিক্রমায় এটি আজ দেশের সবচেয়ে বড় এবং দৃষ্টিনন্দন শিমুল বাগানে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালবাসা দিবস ও বসন্ত উদযাপনের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছেন।
শিমুল বাগানে এসে ভারত থেকে নেমে আসা যাদুকাটার নদীর সৌন্দর্যও উপভোগ করতে পারছেন পর্যটকরা। বাগানে পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ দিতে ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়ানোসহ নাগর দোলনার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া শিশু পর্যটকদের জন্য শিমুল ফুলের মালা তৈরি করে বিক্রি করা হয় এখানে।
দর্শনার্থীদের বাগানে কাটানো প্রিয় স্মৃতি ধরে রাখার জন্য শিমুল ফুল দিয়ে তৈরি লাভ (ভালবাসা) প্রতীকের ভিতরে বসে ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে ফটো তুলার ব্যবস্থাও রয়েছে। মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ানো যায় বৃহৎ এই বাগানে। পাখির কলতানে যেন এক নৈসর্গিক সৌন্দর্য বিরাজ করে সেখানে। তাছাড়া বাগানের ভেতরের ক্যান্টিন ও ক্যাফেতে রয়েছে খাবারের ব্যবস্থা।
ময়মনসিংহের টিপু ফারাজী নামে এক শিক্ষার্থী প্রথমবারের মতো বাগানটি দেখতে এসে সৌন্দর্য্যে বিমোহিত হয়ে জানান, আমি এতো সৌন্দর্যে ভরপুর, আর এতো বড় শিমুল বাগান জীবনে দেখিনি। বসন্তের শুরুতে শিমুল বাগানে আসতে পেরে অনেক ভাল লাগছে। এর আগে আমি শিমুল ফুল দেখিনি।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা সাইফুল ইসলাম, আবির হাসান ও নৌরিন আক্তার বলেন, দেশের অন্যান্য পর্যটন এলাকা থেকে এটি ভিন্ন। এখানে ফুল, নদী, পাহাড় ও নীল আকাশ একসঙ্গে দেখা যায়। তাই প্রতিবছর বসন্ত উদযাপন করতে এখানে আসি। এবার শুরু থেকেই ফুলের পরিমাণ বেশি মনে হচ্ছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পহেলা বসন্তে আরও বেশি সুন্দরে পরিণত হবে বাগানটি।
বাগান মালিক বাদাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রাখাব উদ্দিন বলেন, ‘আমরা পর্যটকদের জন্য সুযোগসুবিধা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে পর্যটকদের সুবিধার জন্য বাগানে ক্যান্টিন ক্যাফে সার্ভিসসহ বিভিন্ন সেবা চালু করা হয়েছে। এখন এখানে ওয়াশরুমের ব্যবস্থা রয়েছে।’
রাখাব উদ্দিন আরও বলেন, ‘বাগানকে কেন্দ্র করে এখানে একটি দৃষ্টিনন্দন রিসোর্ট গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। তবে, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পর্যটকদের কষ্ট করতে হয়।’
তাহিরপুর থানার বারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সব সময় তৎপর রয়েছে। বিশেষ বিশেষ দিনে বাগান ও আশপাশের এলাকায় পুলিশ টহল দিয়ে থাকে।