রমজানে পাবনায় সবজির বাজার অস্থির
‘বাজারে যে অবস্থা তাতে তরকারি দিয়ে ভাত খাওয়াই কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু উপায় নেই। আমরা অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি।' পাবনার বড় বাজারে সবজি কিনতে আসা রমিজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এভাবেই কথাগুলো বলেছিলেন।
গতকাল রোববার পবিত্র মাহে রমজান শুরুর একদিন পরই পাবনায় সব সবজির দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। গত সপ্তাহের ব্যবধানে কিছু সবজির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে শসা, পটল ও বেগুনের। আজ সোমবার সকালে পাবনার বড় বাজার, মাসুম বাজার, অনন্ত বাজার, লাইব্রেরি বাজার, কলেজ গেটসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগের ৪০ টাকা কেজির শসা এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। বেগুনের কেজি ছিল ৩০-৪০ টাকা, সেটা এখন ৬০ টাকায় পৌঁছেছে। ঢ্যাঁড়স ৭০, উচ্ছে ৭০, পটল ৬০-৭০ ও বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১৫-২০ টাকা হালির লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। সজনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
তবে স্বাভাবিক রয়েছে শাকের বাজার। লাল শাক ৩০ টাকা কেজি, আঁটি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা। ডাটা শাক বিক্রি হচ্ছে কেজি ৩০-৪০ টাকায়। বড় ডাটার শাক তিন আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। আর আকার ভেদে লাউ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, খরায় সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এজন্য বাজারে সবজির সরবরাহ কম। এ জন্য প্রতি বছরের এই সময়ে বাজারে কিছু সবজির দাম বেড়ে যায়। এবারও তাই হয়েছে।
খুচরা ব্যবসায়ী উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ‘আমি কী করতে পারি? পাইকারি বাজার থেকে প্রতিকেজি শসা কিনেছি ৭০ টাকায়। এখানে বিক্রি করছি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। আমাদেরও দিনশেষে ৫০০-১০০০ টাকা হাজিরা থাকতে হবে। ’
আরেক ব্যবসায়ী জামরুল প্রামাণিক বলেন, ‘পাইকারি বাজারেও সবজি নেই। সেখানে আমাদেরই সবজি কিনতে হয় হুড়াহুড়ি করে। আমি পটল, ঢ্যাঁড়স, উচ্ছে যে দামে বিক্রি করছি, তাতে ২-৩ টাকা কেজিতে লাভ করছি।’
এদিকে রমজান মাসের শুরুতেই বাজারে এমন অবস্থায় বিপাকে সাধারণ ক্রেতারা। কয়েকজন ক্রেতা বলেন, ‘বাজারে যে অবস্থা তাতে তরকারি দিয়ে ভাত খাওয়াই দুরূহ ব্যাপার। কিন্তু উপায় নেই। আমরা অসহায় অবস্থায় পড়েছি। আমাদের আয়ের যে অবস্থা, তাতে বাজারে এলেই হতাশ হয়ে যাই।’
বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে আরেক ক্রেতা রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছরই রমজান মাস এলেই বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। কিন্তু তাতেও আমাদের প্রশাসনের নজর নেই। তারা রমজানের আগে এই করব, সেই করব কিন্তু দেখা যায় কিছুই হয় না। অসাধু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়েই যায়। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় তারা বেপরোয়াভাবে দাম হাকিয়ে নেয়।’
পাবনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও বাজারদর মনিটরিং কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা নিয়মিতই বাজার মনিটরিং করছি। আমাদের পাশাপাশি ভোক্তা অধিদপ্তরও মনিটরিং করছে। অনেক ব্যবসায়ীকে আমরা ইতোমধ্যেই শাস্তির আওতায় নিয়ে এসেছি। এর পরও যদি কোনো ব্যবসায়ী অবৈধভাবে দাম বৃদ্ধি করে থাকে, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’