রাজশাহী মেডিকেলে আরও ১৩ জনের মৃত্যু, রোগী বাড়ায় মেঝেতে চিকিৎসা
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে একদিনের ব্যবধানে করোনা পরিস্থিতি আবারও খারাপের দিকে গেছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ও উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালটিতে মৃত্যু হয়েছে আরও ১৩ জনের। আগের দিন চারজনের মৃত্যু হয়েছিল। এ ছাড়া রামেকের পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষায় একদিনে সংক্রমণের হার বেড়েছে ১৪ দশমিক ৬০ শতাংশ।
রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, মারা যাওয়া ১৩ জনের মধ্যে ছয়জন করোনা পজিটিভ ছিলেন। অন্য সাতজন নমুনা পরীক্ষার আগেই মারা গেছেন। মৃত ১৩ জনের মধ্যে ছয়জনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। অন্যদের মধ্যে নওগাঁর তিনজন, রাজশাহীর দুজন, নাটোরের একজন ও কুষ্টিয়ার একজন রয়েছেন। মৃতদের মধ্যে ১২ জন পুরুষ ও একজন নারী। এ ছাড়া করোনা পজিটিভ হয়ে যে ছয়জন মারা গেছেন, তাঁদের মধ্যে পাঁচজনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবং অপর একজন নওগাঁর বাসিন্দা।
রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক আরও জানান, ১৩ জনের মধ্যে ছয়জনের বয়স ৬১ বছরের বেশি। এ ছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে দুজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে তিনজন ও ৩১ থেকে ৪০ বছরের দুজন রয়েছেন। এদিক, গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৩৫ জন করোনা রোগী। এ ছাড়া নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪২ জন। বর্তমানে হাসপাতালের ৯টি করোনা ওয়ার্ডে ও কেবিনে ২৯৪ জন করোনা রোগী ভর্তি রয়েছে। এই ৯টি ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা ২৭১টি।
এদিকে, করোনা ওয়ার্ডে শয্যার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় কোনো কোনো ওয়ার্ডে মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে হাসপাতালের ছয়টি এসি ও ১৪টি নন এসি কেবিনের মধ্যে তিনটি এসি ও তিনটি নন এসি কেবিন ফাঁকা রয়েছে।
ডা. সাইফুল ফেরদৌস আরও জানান, শনিবার রাজশাহী মেডিকেলের দুটি পিসিআর ল্যাবে ৩৪১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৮৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের হার ৫৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগের দিন শুক্রবার সংক্রমণের হার ছিল ৩৯ দশমিক ০৭ শতাংশ। ওইদিন ৩৬৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৪৩ জনের করোনা পজিটিভ এসেছিল।
রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে চাপ বেড়েছে রাজশাহী মেডিকেলে। প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত রোগীরা আসছেন চিকিৎসা নিতে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সমৃদ্ধ ৯টি ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ডে রূপান্তরিত করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাড়তি রোগী ভর্তি থাকায় করোনা ওয়ার্ডগুলোর মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
এরপরও রোগী এলে তাদের ভর্তি করা হবে জানিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম ইয়াজদানী জানান, হাসপাতালের আরও কয়েকটি ওয়ার্ডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে। অক্সিজেন সংযোগ দেওয়া শেষ হলে সেসব ওয়ার্ডেও করোনা রোগী ভর্তি করা হবে।
এদিকে, করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে রাজশাহী নগরীতে এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউনের তৃতীয় দিন চলছে আজ রোববার। লকডাউনের কারণে নগরীতে ওষুধের দোকান ও কাঁচাবাজার ছাড়া সব ধরনের দোকান বন্ধ রয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু রিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করলেও রাজশাহী নগরীর সঙ্গে সারা দেশের বাস ও রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। গত শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে শুরু হওয়া এই লকডাউন চলবে আগামী ১৭ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত।
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু আসলাম জানান, নগরবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি ও লকডাউন মানাতে মাঠে রয়েছেন একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদিকে, স্বাস্থ্যবিধি ও লকডাউন না মানায় গতকাল শনিবার এসব ভ্রাম্যমাণ আদালত ৫৭ জনকে ৩৪ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করেছেন।