রাতভর রণক্ষেত্র নিউমার্কেট, ঢাকা কলেজে চলছে বিক্ষোভ
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেট ও আশপাশের ব্যবসায়ীদের রাতভর সংঘর্ষে উত্তাল ছিল এলাকা। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মোটরসাইকেল। চলেছে ইট-পাটকেল বিনিময়। ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে’ পুলিশ ছুড়েছে রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল। সংঘর্ষে ঢাকা কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও পুলিশ আহত হয়েছেন বলে বিভিন্নসূত্রের দাবি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলছে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা।
গতকাল সোমবার দিনগত রাত ১২টার দিকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ আড়াই ঘণ্টার ব্যবধানে নিয়ন্ত্রণে এলেও বর্তমান পরিস্থিতি থমথমে। এদিকে, পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছুড়েছে দাবি করে শিক্ষার্থীরা এখনো তাঁদের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সংঘর্ষের পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থান করছেন। ক্যাম্পাসের উল্টো দিকের তেলপাম্পের সামনে লাঠি, রড, স্ট্যাম্পসহ অবস্থান নিয়েছেন অনেকে। কলেজের ছাদে অবস্থান নিয়ে পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের দিকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে দেখা গেছে অনেককে।
শিক্ষার্থীদের দাবি পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছুড়েছে। এর প্রতিবাদে কলেজের ভেতরে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন।
এদিকে রাত আড়াইটার দিকে সংঘর্ষে আহত দুই শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয় বলে দাবি করেছেন কয়েক শিক্ষার্থী। তাঁরা আহতদের নাম জানান—মোশাররফ হাজারি (২৪) ও রজব ইসলাম (২৭)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, পুলিশের রাবার বুলেটে মোশারফ হোসেন আহত হন। অন্যদিকে পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেল এসে লাগে রজবের বুকে।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষে আহত দুই শিক্ষার্থীর চিকিৎসা জরুরি বিভাগে চলছে।’ দুই ব্যবসায়ীর চিকিৎসাও একই হাসপাতালে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা কলেজ ও নিউমার্কেটের মধ্যবর্তী সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ব্যারিকেড দিয়েছে রেখেছে। পুরো রাস্তাজুড়ে ইটের টুকরা ও কাঁচ ভাঙা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। ওই সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, নুরজাহান ও ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেটের ভেতরে অবস্থান করছেন ব্যবসায়ীরা।
সংঘর্ষের সময় রাস্তার দুই পাশে রাখা একাধিক মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়েছে। সেগুলো জ্বলতে দেখা যায়। তবে, মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগকারীদের বিষয়ে জানা যায়নি।
সংঘর্ষে একাধিক পুলিশের সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদ। তবে প্রাথমিকভাবে কতজন আহত হয়েছেন, তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না।
এডিসি হারুন অর রশীদ উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘সংঘর্ষ শুরুর পরপরই আমরা ঘটনাস্থলে আসি। সেসময় শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা মুখোমুখি অবস্থানে ছিলেন। দুপক্ষই ইটপাটকেল ছুড়ছেন। আড়াই ঘণ্টা পর উভয়পক্ষকে শান্ত করা সম্ভব হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে গেছেন। ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গেছেন।’
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছেন। নিরাপদ অবস্থানে থেকে তাঁদেরকে নিবৃত্ত করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়েছে।’
এ ঘটনায় মামলা হবে কি না, জানতে চাইলে এডিসি হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং ঘটনার সূত্রপাত বিশ্লেষণের পর মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদিও কিছু যানবাহন ও কয়েকটি দোকানে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি হলে এবং তাঁরা যদি অভিযোগ করেন অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
শিক্ষার্থীদের দাবি, ঢাকা কলেজের মাস্টার্সের দুই শিক্ষার্থী রাত ১২টার দিকে নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে যান। কেনাকাটা নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দুই শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে, এমন খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে নিউমার্কেট এলাকায় যান ঢাকা কলেজের একদল শিক্ষার্থী। পরে ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।