রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় হেফাজত নেতারা
রাজধানীর ধানমণ্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় বৈঠক করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতারা। গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে বাসায় ঢুকে হেফাজত নেতারা সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের জন্য তাঁর বাসায় যান মহাসচিব মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী, কউমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজী প্রমুখ। এদের মধ্যে মাওলানা মাহফুজুল হক গত রোববার গ্রেপ্তার হওয়া হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের ভাই এবং মোহাম্মদপুরের জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসা থেকে বেরিয়ে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেনি হেফাজত নেতারা।
রাত সাড়ে ১২টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘হেফাজত নেতারা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তাঁদের তিনি বলেছেন, পুলিশ নিরীহ কাউকে হয়রানি করছে না। যারা ভাঙচুর–সহিংসতায় জড়িত, শুধু তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যা করা হচ্ছে, সব আইন অনুযায়ীই হচ্ছে। আর মাদ্রাসা খুলে দেওয়া বা বন্ধের সিদ্ধান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একার কোনো বিষয় নয়।’
গত ৪ এপ্রিল সোনারগাঁওয়ে রয়েল রিসোর্টে হেফাজতের যুগ্ন মহাসচিব মামুনুল হক এক নারীসহ অবরুদ্ধ হন। এ ঘটনায় তাঁর সমর্থকেরা রয়েল রিসোর্টে হামলা, আওয়ামী লীগ অফিস ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও মহাসড়কে অগ্নিসংযোগসহ সহিংসতা চালায়। পুলিশ বাদী হয়ে দুটি এবং ক্ষতিগ্রস্তরা বাদী হয়ে পাঁচটি মামলা করে। এসব মামলায় ৪৪৬ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ১৮০০ জনকে আসামি করা হয়। এ পর্যন্ত এই সাত মামলায় পুলিশ ৬৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এ ছাড়া গতকাল রোববার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে আদালতে হাজির করে মোহাম্মদপুর থানায় এক ব্যক্তির করা ছিনতাই ও মারধরের মামলায় সাতদিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত তাঁর সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে যোগ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু, মোদির সফরের বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলামসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।
এই প্রতিবাদের জের ধরে ঢাকায় ব্যাপকভাবে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বিক্ষোভের সময় চারজন নিহতের ঘটনাও ঘটে। এরপর দুদিন ধরে সহিংসতা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও একাধিক প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটে। হামলা ও ভাঙচুর করা হয় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।
এসব ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা হয়েছে; যাতে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের নামও রয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত হাজার হাজার মানুষকে এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন হেফাজতে ইসলামের নেতাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার মতিঝিলে তাণ্ডবের ঘটনায়ও অনেক হেফাজতে ইসলামের নেতার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। সেসব মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে নেতাদের।
বিভিন্ন সময়ে যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, হেফাজতে ইসলামের সহকারী মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদ, হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল ইসলাম ইসলামাবাদী, হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি আল্লামা জুনায়েদ আল হাবীব, হেফাজতে ইসলামের সহকারী মহাসচিব ও লালবাগ মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা শাখাওয়াত হোসাইন রাজী, ঢাকা মহানগরের নায়েবে আমির মোহাম্মদ যোবায়ের, মাদানীনগর মাদরাসার মুহাদ্দিস মুফতি বশির উল্লাহ প্রমুখ গ্রেপ্তার হন।