রামেকের করোনা ওয়ার্ডে আরও ১০ মৃত্যু, লকডাউন বাড়ল এক সপ্তাহ
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন করোনা পজিটিভ ছিলেন। অন্যরা নমুনা পরীক্ষার আগেই মারা যান। মৃত ১০ জনের মধ্যে সাতজনই রাজশাহীর বাসিন্দা। অন্য তিনজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁর বাসিন্দা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম ইয়াজদানী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শামীম ইয়াজদানী বলেন, মৃত ১০ জনের মধ্যে পাঁচজনের বয়স ৬১ বছরের ঊর্ধ্বে, চারজনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ও একজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ইউনিটে ৪৪ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর ২৬ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাতজন, নাটোরের চারজন, নওগাঁর চারজন, মেহেরপুরের দুজন ও চুয়াডাঙ্গার একজন রয়েছে। একই সময়ে করোনা ইউনিট থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৩১ জন। বর্তমানে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ২০টি ও কেবিনের ১৫টি শয্যাসহ নয়টি করোনা ওয়ার্ডের ৩০৯টি শয্যার বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩৫৮ জন। তাদের মধ্যে রাজশাহীর ১৯৯ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৯৮ জন, নাটোরের ২৪ জন, নওগাঁর ২৪ জন, পাবনার চারজন, কুষ্টিয়ার চারজন, চুয়াডাঙ্গার দুজন এবং অন্যান্য জেলার তিনজন রয়েছে।
এদিকে, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রামেক হাসপাতালের দুটি পিসিআর ল্যাবে রাজশাহী অঞ্চলের তিন জেলার সর্বশেষ ৫৫৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৯৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে শনাক্তের হার ৪১ দশমিক ০৫ শতাংশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ ও নাটোরে ১২ দশমিক ০৫ শতাংশ।
এদিকে, রাজশাহী মহানগর এলাকায় সর্বাত্মক লকডাউনের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে রাজশাহী সার্কিট হাউজে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর ঘোষণা দেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এই এম খায়রুজ্জামান লিটন। এ সময় রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম ইয়াজদানী, মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক, জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শরিফুল হক, সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার উপস্থিত ছিলেন।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, লকডাউন চলাকালে মহানগর এলাকায় জরুরি সেবা ও ওষুধের দোকান ছাড়া সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। কাঁচাবাজার নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা থাকবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেচাকেনা করতে হবে। জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের অফিস বন্ধ থাকবে। জরুরি সেবা, রোগী পরিবহণ ও কাঁচামাল পরিবহণের সঙ্গে জড়িত যানবাহন ছাড়া গণপরিবহণ ও ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। জেলার কোনো উপজেলা থেকে চিকিৎসার জন্য আসা ব্যক্তিরা ছাড়া অন্য কেউ মহানগর এলাকায় ঢুকতে পারবে না।
লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণাকালে সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘এক সপ্তাহের লকডাউনে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি খুব একটা কমেনি। ১৪ দিনের সর্বাত্মক লকডাউন ছাড়া সংক্রমণের হার তেমন একটা কমে না। এ কারণে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।’ মেয়রের প্রত্যাশা, মানুষ লকডাউনের বিধিনিষেধ মেনে চললে রাজশাহীর করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। আগামী ঈদের আগে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছু স্বাভাবিক হবে।
গত মে মাসের মধ্যভাগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনাভাইরাসের ডেল্টা (ভারতীয়) ভ্যারিয়্যান্টের সংক্রমণ শুরু হয়। তখন এই জেলায় লকডাউন আরোপ করা হলেও রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোর জেলায় লকডাউন ছিল না। সেই সুযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাইরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার বিকেল পাঁচটা থেকে রাজশাহী নগরীতে লকডাউন আরোপ করে প্রশাসন।