রাষ্ট্রপতির সঙ্গে জাকের পার্টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও বিজেপির সংলাপ
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে চলমান সংলাপের ১৬তম দিনে আজ পৃথকভাবে আলোচনায় অংশ নেয় জাকের পার্টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)।
বঙ্গভবনের দরবার হলে অনুষ্ঠিত আলোচনায় রাজনৈতিক দলের নেতারা নিজ নিজ দলের পক্ষে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব দেন, বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন এ তথ্য সাংবাদিকদের জানান।
দলগুলো সময়োপযোগী নির্বাচনী আইন প্রণয়ন, সেটা সম্ভব না হলে একটি অধ্যাদেশ জারি কিংবা অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা, নির্বাচনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও ই-ভোটিং পদ্ধতি প্রয়োগসহ রাষ্ট্রপতিকে বিভিন্ন প্রস্তাব দেয়।
প্রথমে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয় জাকের পার্টি। সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে অনুষ্ঠিত আলোচনায় ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দলের চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সল। তাঁরা নির্বাচনি আইন প্রণয়নসহ চার দফা প্রস্তাব পেশ করেন। জাকের পার্টি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্লক চেইন পদ্ধতি ও ই-ভোটিং পদ্ধতি প্রয়োগের প্রস্তাব করে। নেতারা বলেন, এর মাধ্যমে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ঘরে বসেই ভোট দিতে পারবেন এবং এতে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। তারা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর স্বঘোষিত ও আত্মস্বীকৃত ভোটারদের ডাটাবেজ তৈরি ও প্রকাশের প্রস্তাব করেন। দলটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করে।
এরপর বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আবদুল আউয়াল মামুনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল আলোচনায় অংশ নেয়। তারা নির্বাচনী আইন প্রণয়ন সম্ভব না হলে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করে। তারা সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনকে নির্বাহী বিভাগের সহযোগিতা এবং নির্বাচন কমিশন ও সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা বলে।
সবশেষে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি- বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল আলোচনায় অংশ নেয়। প্রতিনিধিদল চার দফা প্রস্তাব দেয়। তারা নির্বাচনি আইন প্রণয়ন, আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন ও সামরিক বাহিনীকে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় সহযোগী শক্তি হিসেবে সম্পৃক্তকরণের প্রস্তাব দেয়।
রাষ্ট্রপতি প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, গণতন্ত্রে নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও সুপারিশ ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য রাজনীতিতে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে এবং এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোকেই উদ্যোগী হতে হবে।
এ ছাড়া ত্যাগী ও সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিরা যাতে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হতে পারে সে জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন এবং সচিব (সংযুক্ত) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
জয়নাল আবেদীন বলেন, রাষ্ট্রপতি একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য ইসি গঠনের বিষয়ে সংলাপের জন্য ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ ৩২টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান সংলাপের প্রথম দিন গত ২০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের (সংসদ) প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন তিনি।
এর মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আজকের সংলাপে অংশ নেয়নি। এ নিয়ে মোট সাতটি রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকে।
আগামী ১৭ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংলাপের কথা রয়েছে।
এর আগে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।