রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে বিদায় জানাতে প্রস্তুত হচ্ছে বঙ্গভবন
দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্তির পর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে বিদায় জানাতে প্রস্তুত হচ্ছে বঙ্গভবন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন আজ বুধবার (১৯ এপ্রিল) জানান, ২৪ এপ্রিল সকাল ১১টায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের উত্তরসূরি মো. শাহাবুদ্দিন শপথ নেওয়ার পরই দুপুর সাড়ে ১২ টায় বিদায় অনুষ্ঠান শুরু হবে।
জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘এই প্রথম কোনো রাষ্ট্রপতিকে এতো বড় বিদায় দেওয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানটিকে স্মরণীয় করে রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
আগামী ২৪ এপ্রিল দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. আবদুল হামিদের দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ হবে।
রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালের ২০ মার্চ তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন। একই বছরের ১৮ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি। তিনি ২০১৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে পুনরায় নির্বাচিত হন।
বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল গ্রাউন্ডে বিদায়ী গার্ড অব অনার প্রদানের মধ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে। শেষে তৎকালীন রাষ্ট্রপতির গার্ড অব অনার বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে একটি খোলা ফুলে সজ্জিত জিপে ফোয়ারা এলাকা থেকে প্রধান ফটকের দিকে যাত্রা করবেন।
জয়নাল বলেন, বঙ্গভবনে তার দীর্ঘ অবস্থানের সমাপ্তি শেষে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর (এসএসএফ) তত্ত্বাবধানে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে একটি ভিভিআইপি মোটর শোভাযাত্রায় নগরীর নিকুঞ্জ এলাকায় তার নতুন বাসভবনের উদ্দেশে রওনা হবেন।
ক্রেডেনশিয়াল গ্রাউন্ডে গার্ড অব অনার এবং প্রধান ফটকে স্যালুট গার্ড প্রদান করবে প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড রেজিমেন্ট। অন্যদিকে অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে বহন করবে সুন্দর সাজানো গাড়ি। বঙ্গভবনের সব কর্মকর্তারা দুই দলে ভাগ হয়ে গাড়ির সামনে দড়ি টেনে দাঁড়াবেন। তারপর এটি সামনে অগ্রসর হবে।
বঙ্গভবনের ভিতরে সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং পিজিআর সদস্যরা ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেবেন এবং আবদুল হামিদ বঙ্গভবনকে বিদায় জানিয়ে একটি খোলা জিপে বঙ্গভবন থেকে প্রস্থান করবেন।
গত ১৭ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সম্মানে বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এক বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, তিনি রাষ্ট্রপতি হলেও নিজেকে সব সময় দেশের একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেই মনে করতেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, রাষ্ট্রপতির পদকে দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করে তিনি তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন।
বঙ্গভবনের উন্নয়নে তার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বঙ্গভবন মর্যাদার প্রতীক।’
আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ আবদুল হামিদ ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আবদুল হামিদ আইন অনুযায়ী অবসর ভাতা, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
রাষ্ট্রপতি হামিদ শুধু সংস্কার করা এয়ার রেইড শেল্টার ও বঙ্গভবন তোষাখানা জাদুঘর উদ্বোধন করেননি, জনসাধারণের জন্য উন্মুক্তও করেন।
বঙ্গভবন তোষাখানা জাদুঘরকে বাঙালির শতবর্ষের বর্ণাঢ্য ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গভবনের সমৃদ্ধ ইতিহাস সংরক্ষণ ও তা জাতির ভবিষ্যত প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে বঙ্গভবন তোষাখানা জাদুঘর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে বঙ্গভবন উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে তোশাখানা ও এয়ার রেইড শেল্টার হাউসের আধুনিকীকরণ এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়। তোষাখানা বাড়িগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারের উপহার দিয়ে সজ্জিত।