রাষ্ট্রের কি দায়িত্ব নেই, র্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যুর বিষয়ে প্রশ্ন হাইকোর্টের
নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিন নামে এক নারীর মৃত্যুর কারণ ও এ ঘটনায় মামলা হয়েছে কি না জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে যারা ওই নারীকে তুলে নিয়েছেন, তাদের পদবিসহ তালিকা চেয়েছেন আদালত। এ ছাড়া জেসমিনের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকালের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়েছে।
আজ সোমবার (২৭ মার্চ) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।
গতকাল রোববার র্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে বলে তার পরিবার অভিযোগ করে। বিষয়টি নিয়ে এনটিভিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক এ সংক্রান্ত খবর আদালতের নজরে আনেন। স্বপ্রণোদিত আদেশের আরজি জানান এই আইনজীবী।
বিষয়টি নজরে আনলে ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে কি না তা জানাতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে জানান, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। ভুক্তভোগীর পরিবার কোনো মামলা করেননি। তখন হাইকোর্ট বলেন, ‘কেন ওনারা মামলা করবেন? রাষ্ট্রের কি দায়িত্ব নেই? দেশজুড়ে এই ইস্যুটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’
একপর্যায়ে হাইকোর্ট রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে বলেন, ‘আমরা ভুক্তভোগী নারীর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখব, সেটা আগামীকাল নিয়ে আসবেন। আর ওই নারীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে কোন কোন কর্মকর্তা ছিলেন, তাদের সবার নাম-পরিচয় আমাদের সামনে নিয়ে আসবেন। আমরা দেখতে চাচ্ছি, এ ঘটনার সঙ্গে আইনের কোনো গাফিলতি আছে কি না।’
এ সময় হাইকোর্ট বলেন, ‘জনগণ তাকিয়ে আছে ন্যায় বিচার দেখতে, আর আমরা আছি ন্যায় বিচার করতে।’ এরপর আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকালের দিন ধার্য করেন।
গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় এলাকা থেকে জেসমিনকে আটক করে র্যাব। আর গত শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই নারীর মৃত্যু হয়। মৃত জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন।
র্যাবের দাবি, প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার জেসমিনকে আটক করা হয়। আটকের পর অসুস্থ হয়ে তিনি মারা গেছেন। তবে, স্বজনদের অভিযোগ র্যাব হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।