রিজভীকে আনা-নেওয়ায় মানা হচ্ছে না আদালতের নির্দেশ, অভিযোগ আইনজীবীদের
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব কারাবন্দি রুহুল কবির রিজভী অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাকে কেরাণীগঞ্জ কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে আদালতে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ প্রবিধান এবং কোর্টের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন তার আইনজীবীরা।
আইনজীবীরা জানান, আজ রোববার (৫ মার্চ) কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানের ভেতরে একটি নড়বড়ে তিন পায়ার টুলে বসিয়ে ঢাকা মহানগর জজ কোর্টে আনা হয় রিজভীকে। সেই প্রিজন ভ্যানে হাতলও ছিল না। কারাগার থেকে পুরানো ঢাকার ভয়াবহ যানজট পেরিয়ে দীর্ঘ সময়ের পথে প্রচণ্ড গরমে এভাবে আনার ফলে রিজভী অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার একইভাবে তাকে কোর্টে আনা হলে তাঁর আইনজীরীরা বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিতে আনলে আদালত রিজভীকে কারাগার থেকে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন এমন পরিবহণের ব্যবস্থার জন্য মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আজও তা কার্যকর হয়নি।
রিজভীর প্যানেল আইনজীবী এডভোকেট মো. মশিউর রহমান শাহ শান্ত বলেন, ‘বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একজন প্রথম শ্রেণির ডিভিশনপ্রাপ্ত সম্মানিত বন্দি।’ তিনি বলেন, ‘পিআরবি, প্রবিধান ৪৮০ অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণির বিচারাধীন বন্দিদের প্রিজন ভ্যান বা ভাড়া করা গাড়িতে আনা-নেওয়া করতে হবে এবং তাদের যাতায়াতে যুক্তিসঙ্গত আরাম ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে হবে।’ আইনজীবী মশিউর রহমান আরও বলেন, ‘যেহেতু একজন সম্মানিত ব্যক্তি এবং তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ এজন্য তিনি যাতায়াতে স্বস্তি বোধ করেন সেভাবেই কোর্টে আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিজ্ঞ আদালত মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশনা অমান্য করে আজ রোববারও রিজভীকে যে প্রিজন ভ্যানে আনা হয়েছে সেখানে কেবল একটি টুল দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেখানে ধরার বা কোন সাপোর্টিং কিছু ছিল না।’
এর আগে গত ২ মার্চ কেরাণীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে রুহুল কবির রিজভীকে যে প্রিজন ভ্যানে কোর্টে আনা হয় সেখানে বসার কোন বেঞ্চ বা ধরে দাঁড়ানোর জন্য হাতল ছিল না। ফলে কারাগার থেকে পুরানো ঢাকার ভয়াবহ যানজট পেরিয়ে দীর্ঘ সময়ের পথে তাকে প্রিজনভ্যানের ভেতরে একটি টায়ারের ওপর বসে আসতে হয়। রিজভীর আইনজীবীগণ বিষয়টি আদালতে আবেদন করলে আদালত তৎক্ষণাৎ ওসি হাজতকে নির্দেশ প্রদান করেন, যেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে কারাগার থেকে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে তার সন্তোষজনক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
আইনজীবী মশিউর রহমান বলেন, ‘রিজভী একজন বয়স্ক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি। তাকে সর্বদা লাঠির ওপর ভর দিয়ে চলতে হয়। সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করতে অন্যের সাহায্য দরকার হয়। এমন একজন ব্যক্তিকে সেই কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পুরনো ঢাকার আদালতে প্রিজন ভ্যানে যেভাবে আনা হচ্ছে তা অমানবিক, অসাংবিধানিক ও নিষ্ঠুর আচরণ এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন।’
রিজভীর সহধর্মিণী আরজুমান আরা বেগম বলেন, ‘রুহুল কবির রিজভী কারাগারে যাওয়ার আগে অনেকটা সুস্থ ছিলেন। কিন্তু কারাগারে যাওয়ার পর তার অসুস্থতা বেড়েছে। মুখের দিকে তাকালে চেনা যায় না। হাত ও মুখের চামড়া কেমন যেন কালচে হয়ে গেছে। এলোমোলো চেহারা। আসলে তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে কি না বুঝা মুশকিল।’ তিনি বলেন, ‘আদালতে রিজভীকে দেখার পর নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারিনি। তাকে চিনতে যে কারো কষ্ট হবে। রিজভী শারীরিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার শরীর ভালো নেই। তার অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসা দরকার। আমরা তার নিয়মিত খোঁজখবর পাই না। এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি রিজভী কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।’
রিজভীর স্ত্রী আরও বলেন, ‘স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় রুহুল কবির রিজভী পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তখন দেশে ও পরে বিদেশে তার পেটে অস্ত্রোপচার হয়। এরপর মাঝেমধ্যে তার পেটে সমস্যা হতো। সেই থেকে প্রায় ৩০ বছর ধরে রিজভী হাতের স্পর্শে খাবার খান না। খোলা পানিও খান না।’
উল্লেখ্য যে, গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ওই দিনই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে সাড়ে চার শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেদিন রিজভীকেও আটক করে কারাগারে নেওয়া হয়। সম্প্রতি তাকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তিনি কারাগারে যাওয়ার আগে দলের বিভিন্ন বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতেন। বিশেষ করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ও হামলা-মামলা নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন করতেন।