রোগীদের ভোগান্তির মধ্য দিয়ে খুলনায় চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে
সাতক্ষীরার কলারোয়া থেকে মা সাজেদা বেগমকে (৭০) নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে এসেছেন আকলিমা বেগম। মা স্ট্রোক করেছিলেন। তাঁর ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেসার রয়েছে। গত চারদিন এখানেই আছেন। এই সময়ে বড় ডাক্তার আসেননি। নার্সরা আসছেন। সাজেদা বেগম মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আকলিমা বেগম বলেন, ‘চারদিন বসে আছি, আর কয়দিন বসে থাকব জানিনা। ঠিকমতো সেবা পেলে মা সুস্থ হয়ে যেত।’
শুধু আকলিমা বেগমই নন, খুলনায় চিকিৎসকদের টানা কর্মবিরতির কারণে খুমেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসাবঞ্চিত হচ্ছেন হাজারো রোগী। রোগীদের এই ভোগান্তির মধ্য দিয়ে আজ শনিবার (৪ মার্চ) চতুর্থ দিনের মতো চলছে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি।
শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহের ওপর হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে টানা এই কর্মবিরতি পালন করছেন চিকিৎসকরা। ফলে শনিবার নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিক ও ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসকদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করা হয়েছে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা।
এদিকে, কর্মবিরতি প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পযর্ন্ত বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবনে চিকিৎসক নেতাদের সঙ্গে এবং রাতে বিভাগীয় ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারপরও কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অনড় রয়েছেন চিকিৎসকরা।
গতকাল রাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির সঙ্গে খুলনার বিভাগীয়, জেলা এবং পুলিশ প্রশাসনের দীর্ঘ বৈঠক হয়। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আজ শনিবার কর্মবিরতি প্রত্যাহার হওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন।
অপরদিকে, খুলনা জেলা বিএমএ সভাপতি ডা. বাহারুল আলম জানান, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হলে কর্মসূচি প্রত্যাহার হতে পারে বিএমএ বৈঠকের পর। শনিবার দুপুর ১২টায় শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের সামনে চিকিৎসকদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ সমাবেশ করার কথা রয়েছে। রাতে বিএমএ ভবনে চিকিৎসকদের জরুরি সাধারণ সভা রয়েছে।
খুলনা জেলা বিএমএ সাধারণ সম্পাদক ডা. মেহেদী নেওয়াজ আজ সকালে জানান, তাঁদের কর্মবিরতি চলবে। বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হবে । রাতে প্রশাসনের বৈঠকের ফলাফল তাঁদের জানানো হয়নি।
এদিকে চার দিন ধরে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে রোগীরা। প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা নিতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন।