রোগী ভাগিয়ে প্রতারণা ও বিয়ে করাই মামুনের কাজ
শাহাদাত হোসেন ওরফে মামুন রাজধানীর শ্যামলীর ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার হাসপাতালের পরিচালক পরিচয় দিতেন। এই পরিচয় দিয়ে তিনি হাসপাতালের অর্থোপেডিক ইউনিটে রোগী ভর্তি করিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানাতেন পরিচিতদের। রোগী ভর্তি করিয়ে দিতে পারলে নগদ ৩৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রলোভন দেখাতেন তিনি।
শুধু তাই নয়, র্যাবের দাবি; মামুন সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে প্রতারণা করতেন। এই অভিযোগে মামুন ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। র্যাব বলছে, রোগীর সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া তাদের প্রধান কাজ। কখনও আইসিইউতে আটকে রেখে, কখনও বড় রোগের কথা বলে ভুয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রটি।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর শ্যামলীর ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক চক্রের এ সদস্যদের গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছেন র্যাব-২-এর পরিচালক খন্দকার সাইফুল আলম। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন শাহাদাত হোসেন ওরফে মামুন, ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার হাসপাতালের কর্মী মহিন উদ্দিন, রহমত উল্লাহ ও আকরাম হোসেন। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে তিন লাখ ৫০ হাজার জাল টাকা ও ৫৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে র্যাব।
র্যাব-২-এর পরিচালক খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে করোনা মহামারির সুযোগে শাহাদাত হোসেন ওরফে মামুনসহ তার সহযোগীরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে এনে ন্যাশনাল হেলথ কেয়ারসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাতেন। এরপর বিভিন্নভাবে আইসিইউতে আটকে রেখে বা অন্য কোনো বড় রোগের কথা বলে বিভিন্ন ভুয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিত চক্রটি। রোগীকে ঝামেলায় ফেলে টাকা হাতিয়ে নিতে মামুন দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের ফোন করে ন্যাশনাল হেলথ কেয়ারে রোগী ভর্তি করে দিতে বলতেন। বিনিময়ে রোগী প্রতি ৩৫ হাজার টাকা নগদ দেওয়ার কথা বলতেন সংশ্লিষ্টদের।’
র্যাবের পক্ষ থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শাহাদাত হোসেন ওরফে মামুনকে মহাপ্রতারক উল্লেখ করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বরাত দিয়ে বলা হয়, প্রতারক মামুন এ পর্যন্ত মোট ২৭টি বিয়ে করেছেন। এসব বিয়ের মাধ্যমে মামুন যৌতুক ও টাকা আদায় করে তাদের জিম্মি করে থাকেন। এ ছাড়া বিয়ে করা বউদের দিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করাতেন। মামুনের প্রতারণার শিকার মূলত বিভিন্ন হাসপাতালের নার্সিং পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নারী এবং হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা সাধারণ রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা। এ ছাড়া প্রতারক মামুন খুলনা অঞ্চলের বহুল আলোচিত ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামি এরশাদ সিকদারের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন বলে র্যাব জানতে পেরেছে। যদিও র্যাব এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত তদন্তের পর তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হতে চায়। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলেও জানিয়েছে র্যাব।