রোজিনাকে গ্রেপ্তার অসহিষ্ণু চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ : মঈন খান
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাঁর মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খান।
আজ বুধবার এক বিবৃতিতে মঈন খান বলেন, “এই ন্যাক্কারজনক গ্রেপ্তার এই সরকারের অসহিষ্ণু চরিত্রের বহিঃপ্রকাশই শুধু করেনি, বরঞ্চ তারা যে এদেশে স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকারকে সম্পূর্ণ কুক্ষিগত করেছে তাও পুনরায় প্রমাণিত করেছে। বিগত এক যুগের বেশি সময় ধরে বর্তমান সরকার এক এক করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, জনগণের ভোটাধিকার, দেশবাসীর স্বাস্থ্যসেবার অধিকারসহ (বিশেষ করে করোনাকালে) এদেশে দরিদ্র মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে তা আজ আর নতুন করে বলার আপেক্ষা রাখে না। গতকালের এই ঘটনাটির একটু সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ করলেই আমার বক্তব্যটি ‘জলবৎ তরলং’ হয়ে উঠবে।”
সাবেক তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “এই গ্রেপ্তারের পেছনে যে মোটিভটি কাজ করেছে তা সরকার এখন আর কিছুতেই ধামাচাপা দিতে পারবে না। এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, সাম্প্রতিককালে করোনা ব্যবস্থাপনার ধুয়ো দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বিগত এক বছরে যে চরম দুর্নীতি হয়েছে রোজিনা ইসলাম তার মাত্র পাঁচটি ‘টিপ অব দ্য আইসবার্গ’ সম্প্রতি কয়েকটি ধারাবাহিক প্রতিবেদনে আলোর মুখ দেখিয়েছেন।”
বিএনপির নেতা বলেন, ‘বলা বাহুল্য, এতে করে বাংলাদেশের একজন চরম নির্বোধও বুঝতে পেরেছে যে, এই রিপোর্টিংয়ের কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কী পরিমাণ গাত্রদাহ সৃষ্টি হয়েছে এবং এখন মনে হচ্ছে যে, রোজিনা ইসলামকে এ ধরনের একটি শিক্ষা দেওয়ার জন্যই বুঝি তারা ওত পেতে ছিল। এই সুযোগটি তাদের হাতে যেন আকাশ ফুঁড়ে এসে গিয়েছিল। যেই না রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলেন, অমনি তারা তাঁকে আটক করল সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে।’
গত সোমবার পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সচিবালয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হয় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে। এ সময় তাঁকে হেনস্তা করা হয়। পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বজনদের দাবি, শারীরিক ও মানসিকভাবে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়ার কথা বলে রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পৌনে ৯টার দিকে তাঁকে থানায় আনা হয়।
গভীর রাতে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি গোপনীয় নথি চুরির মাধ্যমে সংগ্রহ এবং ওই নথি দ্বারা বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক নষ্ট করার অপচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
সোমবার রাত থেকে সাংবাদিকেরা থানায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। নানা নাটকীয়তার পরে গতকাল মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আদালতে তুলে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করে থানা পুলিশ। পরে আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ ঘটনার পর দিনভর সারা দেশে রোজিনা ইসলামের মুক্তি চেয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করেন সাংবাদিকেরা। এ প্রতিবাদের অংশ হিসেবে গতকাল বিকেলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন সাংবাদিক শাহবাগ থানায় গিয়ে স্বেচ্ছায় কারাবরণ করতে আবেদন করেন। তাঁদের দাবি, তাঁদেরও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হোক। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আজও সারা দেশে মানববন্ধন করছে সাংবাদিক সমাজ।