রোজিনাকে মুক্ত দেখতে চাই
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও তাঁর মুক্তি দাবি জানিয়েছে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি)। একইসঙ্গে ব্রিটিশ আমলের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট বাতিলের দাবি জানানো হয় বিজেসি আয়োজিত মানববন্ধন থেকে।
আজ বুধবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারা মোড়ে আয়োজিত এক প্রতিবাদ ও অবস্থান কর্মসূচি থেকে সাংবাদিক নেতারা এ দাবি জানান। সাংবাদিক নেতারা বলেন, অবিলম্বে রোজিনা ইসলামকে নিশর্তে মুক্তি ও তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। নতুবা কঠোর আন্দোলন ঘোষণা করা হবে।
বিজেসির ট্রাস্টি ও জিটিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘রোজিনার গলায় হাত বাংলাদেশের জনগণের ওপর দুর্নীতিবাজ কালো টাকার মালিকদের কালো হাত। আমরা সেই হাতের শাস্তি চাই। এই মুহূর্তে রোজিনাকে মুক্ত দেখতে চাই। এভাবে সাংবাদিকদের ওপর আঘাত চলবে না। একটি গণতান্ত্রিক দেশ এভাবে চলতে পারে না।’
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ও আজকের পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান বলেন, রোজিনা ইসলামকে নির্যাতনের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীন সংবাদপত্র, গণমাধ্যম এবং গণতন্ত্রের যে প্রতিশ্রুতি, সেটি লঙ্ঘিত হয়েছে; ভূপাতিত হয়েছে। দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের নাম ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। এটার জন্য কারা দায়ী? সচিবালয়ের কোনো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী রোজিনা ইসলামকে নির্যাতন করেছে, তা স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে হবে। তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দিতে হবে।’
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ নাগরিক টিভির বার্তা প্রধান দ্বীপ আজাদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সহসভাপতি নজরুল কবীর, বিজেসির সদস্য সচিব ও একাত্তর টিভির বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি শারমিন রিনভী, সাধারণ সম্পাদক এম রাশেদুল ইসলাম প্রমুখ।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, ‘সাংবাদিকদের সঙ্গে আর খারাপ ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। আজ যেভাবে সাংবাদিক সমাজ এক ছাতার নিচে দাঁড়িয়েছে, প্রতিবাদ করছে এভাবেই চলতে থাকবে। প্রয়োজনে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে সাংবাদিক সমাজ। সাংবাদিকদের সাংবাদিকতা করতে দিতে হবে। আমরা এসব ঘটনার জবাব সাংবাদিকতা করেই দেব।’
এ সময় সাংবাদিক নেতারা মানবাধিকার কমিশনকে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে ঘটনার তদন্তের দাবি জানান। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের প্রতি স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করার আহ্বান জানান সাংবাদিক নেতারা।
প্রতিবাদ ও অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা আগামীকাল বৃহস্পতিবার রোজিনা ইসলামকে মুক্তি দেওয়া না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।
প্রতিবাদ ও অবস্থান কর্মসূচি শেষে চারদফা দাবি জানান বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক। দাবিগুলো হলো-
১. অবিলম্বে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তাঁকে নির্যাতন ও হেনস্তাকারীদের শাস্তি দিতে হবে।
২. সাংবাদিক নিপীড়ন বন্ধ করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সংবাদকর্মীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. ব্রিটিশ আমলের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট বাতিল করতে হবে।
৪. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সাংবাদিকতার পরিপন্থি অংশ বাতিল করতে হবে।
গত সোমবার পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সচিবালয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হয় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে। এ সময় তাঁকে হেনস্তা করা হয়। পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বজনদের দাবি, শারীরিক ও মানসিকভাবে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়ার কথা বলে রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পৌনে ৯টার দিকে তাঁকে থানায় আনা হয়।
গভীর রাতে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি গোপনীয় নথি চুরির মাধ্যমে সংগ্রহ এবং ওই নথি দ্বারা বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক নষ্ট করার অপচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
সোমবার রাত থেকে সাংবাদিকেরা থানায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। নানা নাটকীয়তার পরে গতকাল মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আদালতে তুলে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করে থানা পুলিশ। পরে আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ ঘটনার পর দিনভর সারা দেশে রোজিনা ইসলামের মুক্তি চেয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করেন সাংবাদিকেরা। এ প্রতিবাদের অংশ হিসেবে গতকাল বিকেলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন সাংবাদিক শাহবাগ থানায় গিয়ে স্বেচ্ছায় কারাবরণ করতে আবেদন করেন। তাঁদের দাবি, তাঁদেরও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হোক। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আজও সারা দেশে মানববন্ধন করছে সাংবাদিক সমাজ।