র্যাব হেফাজতে ইউনিয়ন ভূমি অফিস সহকারীর মৃত্যুর অভিযোগ
নওগাঁ শহর থেকে আটকের পর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) হেফাজতে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এক নারী কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে তার পরিবার। গত বুধবার (২২ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় এলাকা থেকে আটকের পর গত শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই নারীর মৃত্যু হয়।
মৃত সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন।
র্যাবের ভাষ্য, সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ছিল। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে আটক করা হয়েছিল।
মৃত সুলতানা জেসমিনের মামা ও নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক (মন্টু) সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ভাগনি বুধবার সকালে অফিস করার জন্য বাসা থেকে বের হন। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে একটি সাদা মাইক্রোতে করে র্যাবের পোশাক পরা লোকজন তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাঁকে কোন র্যাব ক্যাম্প নেওয়া হলো এ ব্যাপারে আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিই। দুপুর ১২টার পর জানতে পারি, সুলতানা নওগাঁ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে গিয়ে দেখি র্যাবের লোকজন সেখানে। ভাগনি কোনো কথা বলতে পারছেন না। এর কিছুক্ষণ পর তাঁকে রাজশাহী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। শুক্রবার সকালে মৃত্যু হলেও মরদেহ দেওয়া গতকাল দুপুরের পর।’
নাজমুল হক (মন্টু) আরও বলেন, ‘আমার ভাগ্নি সুলতানা জেসমিনের সঙ্গে তাঁর স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয় ১৭ বছর আগে। এরপর সে তাঁর এক সন্তানকে অত্যন্ত কষ্ট করে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে লালন-পালন করে আসছে। নওগাঁ শহরের জনকল্যাণ এলাকায় একটা ভাড়া বাড়িতে থেকে ছেলেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করাচ্ছে। সে ভূমি অফিসের একজন সামান্য কর্মচারী। কোনো দিন তাঁর বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতি কিংবা অনিয়মের অভিযোগ কেউ করতে পারেনি।’
সুলতানা জেসমিনের ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকত বলেন, ‘আমার মা চক্রান্তের শিকার। র্যাব হেফাজতে থাকা অবস্থায় তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। যে কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’
রাজশাহী র্যাব-৫-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর নাজমুস সাকিব বলেন, ‘সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার একটি অভিযোগ পাওয়ার পর তাঁর ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক টাকা লেনদেনের অভিযোগ ছিল। পরে তাঁর ব্যাংক স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করে আমরা সত্যতা পাই। অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় এলাকা থেকে র্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়। আটকের পর পরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক তাঁকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা তাঁকে রাজশাহী নেওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয় এবং গত শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্ট্রোক করে তাঁর মৃত্যু হয়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে গতকাল শনিবার দুপুরে স্বজনদের কাছে তাঁর মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।’
র্যাবের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আটকের পর ওই নারীকে র্যাবের কোনো ক্যাম্পে নেওয়া হয়নি। আটকের পর পরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার পর থেকেই পরিবারের লোকজন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁর সঙ্গেই ছিল। নির্যাতনের যে অভিযোগ করা হচ্ছে, এটা সঠিক নয়।’