লকডাউনের খণ্ডচিত্র : রোদ-বৃষ্টির খেলায় মানুষের আনাগোনা
বৃষ্টিকে সঙ্গী করে আজ ভোরের আলোর দেখা মেলে রাজধানীতে। বেলা ১১টা পর্যন্ত সারা শহরজুড়ে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি দাপট দেখাতে থাকে। বৃষ্টির বাগড়ায় সকাল থেকে প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে।
তবে বেলা ১১টার পর থেকে যখন বৃষ্টি কমতে শুরু করে; তারপর তুলনামূলকভাবে বেশি মানুষের আনাগোনা দেখা যায় রাজধানীর সড়কে সড়কে।
দুপুর গড়াতে থাকে আর মূল সড়কে কমতে থাকে মানুষ। যদিও অলিতেগলিতে বাড়তে থাকে মানুষের জটলা। জুম্মার নামাজের সময় সড়কে মানুষ কমতে থাকলেও নামাজ শেষে আবার বাড়তে থাকে আনাগোনা। তবে আজ ব্যক্তিগত গাড়ির দাপট কমই লক্ষ্য করা গেছে। সড়কে রিকশাই মূল বাহন ছিল আজ।
বিকেলের দিকে হেসে ওঠে রোদ। রোদের সঙ্গে সঙ্গে শহরের ফুটপাতে বাড়তে থাকে জটলা। যদিও অপ্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার কারণে অনেককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহির মুখে পড়তে হয়েছে।
সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর কলাবাগান, কাঁঠালবাগান, ধানমণ্ডি, ফার্মগেট, আসাদগেট, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মিরপুর-১, মিরপুর-২, মিরপুর-১০, ৬০ ফিট, বাংলামোটর, মগবাজার, শাহজাহানপুর, কমলাপুর, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, শাপলা চত্বর, গুলিস্তান, পুরানা পল্টন, জাতীয় প্রেসক্লাব, শাহবাগ ও কারওয়ান বাজার ঘুরে সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনে সড়কে এমন দৃশ্যই চোখে পড়েছে।
কলাবাগান, কাঁঠালবাগান ও ধানমণ্ডি ঘুরে দেখা গেছে, মূল সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির চেয়ে রিকশার দাপট বেশি। যদিও সকালের দিকে বৃষ্টির কারণে রিকশাচালককে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। তবে মূল সড়কের বাইরে, অর্থাৎ অলিতেগলিতে মানুষের জটলা ছিল চোখে পড়ার মতো।
খোলা ছিল চা-সিগারেটের দোকান, সেলুন, মুদিখানা ও ফ্লেক্সিলোডসহ হোটেল-রেস্তোরাঁ। বৃষ্টির কারণে সকালে মানুষ বাইরে কম এলেও বেলা ১১টার পর চোখে পড়ার মতো ভিড় ছিল দোকানপাটের সামনে। অন্তত অর্ধেক মানুষকে মানতে দেখা যায়নি স্বাস্থ্যবিধি।
বিকেল ৩টা, তখন বৃষ্টির দাপট নেই। ফার্মগেট থেকে আসাদগেট যেতে যেতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও ফার্মগেটে পুলিশের দুটি তল্লাশি চৌকি দেখা যায়। ফার্মগেটে দুজন ও সংসদ ভবনের বিপরীতে চারজন পুলিশকে এককোণে বসে মোবাইল ঘাঁটাঘাটি করতে দেখা গেছে।
আসাদগেট পাড়ি দিয়ে শ্যামলী-কল্যাণপুর হয়ে মিরপুর-১ পর্যন্ত যেতে আরও দুটি তল্লাশি চৌকি পড়ে। টেকনিক্যাল মোড়ে একজন পুলিশকে দেখা গেলেও মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বরে দেখা মেলে সেনাবাহিনীর সদস্যদের। সদস্যরা রাস্তায় ঘোরাফেরা করা মানুষ ও গাড়ি আটকে বের হওয়ার কারণ জানতে চাচ্ছে। কারণ অযৌক্তিক মনে হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামলা ও সাজা দিচ্ছেন। মিরপুর-১-এ পুলিশেরও সবর উপস্থিতি ছিল।
এরপর মিরপুর-২ ও মিরপুর-১০ ঘুরে যাওয়া হয় ৬০ ফিটের পাকা মসজিদের সামনে। সেখানে সেনাবাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিধির নেতৃত্বে অভিযান চালছিল। এ সময় চলাচলত মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়। ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে চালকের পরিচয়পত্র যাচাই করে বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়। কারণ যৌক্তিক হলে ছেড়ে দেওয়া হয়, আর অযৌক্তিক হলে মামলা দিয়ে জরিমানা করা হয়।
জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিধি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বরে আমাদের আরেকটি টিম কাজ করছে। কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি, মূল সড়কের একটু ভেতরে দিকে মানুষজন ঘোরাঘুরি করছে। ফলে এখানে আমরা অভিযান চালাচ্ছি।’
এ সময় সেখানে অন্তত ৩০টি রিকশাকে দাঁড় করানো হয়। এবং রিকশায় থাকা যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর ওই এলাকার ভেতরের রাস্তায় প্রবেশ করে দেখা যায়, প্রচুর মানুষ সেখানে ঘোরাঘুরি করছে। আর যখন সেনাবাহিনী অভিযান চালাচ্ছিল, তখনও আশপাশে অনেক উৎসুক মানুষ দাঁড়িয়েছিল।
সেখান থেকে বের হয়ে আগারগাঁও যেতে যেতে বৃষ্টির বাগড়া শুরু হয়। দেখা মেলে, আগারগাঁও কলোনির মাঠে একদল যুবককে ফুটবল খেলতে। ফার্মগেটে এসে খুব বেশি মানুষকে দেখা যায়নি। দু-একটি প্রাইভেটকার ছাড়া আর কোনো যানবহন দেখা যায়নি।
তারপর বাংলামোটর, মগবাজার, শাহজাহানপুর, কমলাপুর, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, শাপলা চত্বর, গুলিস্তান ঘুরে কম মানুষের উপস্থিতিই দেখা মেলে। কারণ, তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। তবে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন মিলে ফুটপাথে লুডু খেলছেন। আশপাশে অনেকে দাঁড়িয়ে খেলাও দেখছিলেন। লুডু খেলায় নিমগ্ন রুবিনা বেগম বলেন, ‘কাজ নেই, তাই খেলে সময় পার করছি।’
পল্টন, জাতীয় প্রেসক্লাব, শাহবাগ ও কারওয়ান বাজার আসতে আসতে বৃষ্টি থেমে যায়। বৃষ্টি থামার পরপরই আবার মূল সড়কে অথবা অলিতেগলিতে মানুষের জটলা বাড়তে দেখা যায়। এই ছিল মোটামুটি সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনের খণ্ডচিত্র।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ইফতেখায়রুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনে ডিএমপির বিভিন্ন থানা এলাকায় অপ্রয়োজেন বাইরে বের হওয়ার অভিযোগে ৩২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে ২০৮ জনকে। একইসঙ্গে ট্রাফিক পুলিশ ৬৮টি গাড়িকে এক লাখ ১৯ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করেছে।’