‘লকডাউনের পর লকডাউন’ দিয়েও মোংলায় বিশেষ ‘উন্নতি নেই’
বাগেরহাটের মোংলা উপজেলায় গত ৩০ মে থেকে আজ ৩০ জুন পর্যন্ত এক মাসে ধারবাহিকভাবে পাঁচবার কঠোর বিধিনিষেধের (লকডাউন) সময় বাড়ানো হয়েছে। আজ বুধবার ছিল আরোপিত এ বিধিনিষেধের শেষ দিন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশই ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ আওতায় আসছে। এই সময়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকেও বেরোনো যাবে না।
এই এক মাসে মোংলায় করোনা পরিস্থিতির কতটুকু উন্নতি হয়েছে- এই প্রশ্ন ছিল সাধারণ মানুষের। কারণ, আজকের দিনেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপসর্গ নিয়ে ২১ জন করোনা পরীক্ষা করিয়েছেন। এর মধ্যে নতুন করে ১১ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে।
আজ মোংলায় শনাক্তের হার ছিল ৫২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার ছিল ৪৫ শতাংশ। গত সোমবার ছিল ৫৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর আগের দিন রোববার শনাক্তের হার ছিল ৫৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গত এক মাস ধরে মোংলায় শনাক্তের গড় হার ৫৫ ভাগ বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জীবিতেশ বিশ্বাস।
প্রায় এক মাস আগে যখন এই বন্দর উপজেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল তখন এখানে আক্তান্ত শনাক্তের হার ছিল গড়ে ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ। কখনো কখনো এটা ৬৮ থেকে ৭০ ভাগেও গিয়েছে। তারপর গত এক মাসে পাঁচবার কঠোর বিধিনিষেধ বাড়িয়েও সেখানে করোনা পরিস্থিতিকে বিশেষ মোকাবিলা করা যায়নি। তথ্য বলছে, গত এক মাসে উপজেলায় এক হাজার ৬৩ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৮৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জীবিতেশ বিশ্বাস জানান, ‘এখানকার বর্তমান যে শনাক্তের হার তা অবশ্যই উদ্বেগজনক। এটি কমাতে গেলে বিধিনিষেধ শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। বিধিনিষেধ ঠিক মতো না মানাতেই পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি।’
বাগেরহাট জেলার সিভিল সার্জন ডা. ক এম হুমায়ুর কবীর মোংলা উপজেলায় করোনা শনাক্তের এই তথ্যচিত্র শুনে বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, ‘আমি একটি জুম মিটিংয়ে আছি।’
গত মে মাসের শুরুর দিক থেকেই বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলায় করোনা আক্রান্ত ও শনাক্তের হার মারাত্মকভাবে বেড়ে যেতে থাকে। তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক মাসের টানা কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়। আজ বিধিনিষেধের শেষদিন ছিল।
শুরু থেকেই শহরের বড় বড় দোকানপাট ও বিপণীবিতান বন্ধ থাকলেও মানুষের চলাচল কম ছিল না। মানুষের মধ্যে করোনাকে অবহেলা করার প্রবণতাও দেখা গেছে। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে মানুষ বাড়ির বাইরে এসেছে। আজকে অন্যান্য দিনের তুলনায় পৌর শহরের বেশি সংখ্যক দোকানপাট খোলা ছিল। সেই সঙ্গে ছিল যানবাহন ও সাধারণ লোকজনের ব্যাপক সমাগমও।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে সরকার ঘোষিত এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ শুরুর আগের দিন স্বাভাবিক ছিল মোংলার পরিস্থিতি। প্রশাসনেরও খুব বেশি নজরদারি ও তদারকি দেখা যায়নি।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ রোধে মোংলায় পঞ্চম দফার কঠোর বিধিনিষেধের সময়সীমা শেষ হচ্ছে আজ। স্থানীয়ভাবে নতুন করে বিধিনিষেধের সময়সীমা বাড়ানো হচ্ছে না। কিন্তু ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ ঘোষিত বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পালন করা হবে।’