লকডাউনের মধ্যে বইমেলার সময় বাড়ল
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকারের লকডাউন ঘোষণার মধ্যেই অমর একুশে বইমেলার সময় বাড়ানো হয়েছে।
আজ রোববার দুপুরে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমিন নাহার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিদ্যমান পরিস্থিতি ও সরকার কর্তৃক লকডাউন নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বইমেলা হবে।’
একইভাবে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলা ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ যেকোনো কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
এর আগে করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে কর্তৃপক্ষ গত ৩১ মার্চ এক প্রজ্ঞাপনে দৈনিক সাড়ে তিন ঘণ্টা বইমেলা চালু রাখার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছিল। মেলার সময় বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন এমন একটি সময়ে জারি করা হয়েছে যখন সরকার এক সপ্তাহের জন্য সারা দেশে লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘোষণা আগামীকাল সোমবার থেকে কার্যকর হবে। সরকার বলছে, ‘এই আদেশ আমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
করোনার কারণে এ বছর বইমেলা নির্দিষ্ট সময় ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়নি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ বছরের ১৮ মার্চ থেকে বইমেলা শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বাংলা একাডেমিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বইমেলার উদ্বোধন করেন। আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত এ বইমেলা চলার কথা রয়েছে। শুরুর দিন থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত বইমেলা প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টার জন্য খোলা ছিল।
পরে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক অপরেশ কুমার ব্যানার্জী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ‘দেশের ক্রমবর্ধমান করোনা পরিস্থিতিতে অমর একুশে বইমেলা ২০২১-এর সময়সূচিতে আজ ৩১ মার্চ ২০২১ থেকে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে বইমেলা শুরু হবে বেলা ৩টায় এবং শেষ হবে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়।’
আজ আবার সেই সময় পরিবর্তন করে দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টার জন্য বইমেলা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। যদিও গত বৃহস্পতিবার সারা দেশে করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় চলমান বইমেলা বন্ধের সুপারিশ করে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বিকেলে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা চাইনি বইমেলা এভাবে হোক। আমরা চেয়েছিলাম, বইমেলা অনলাইনে হোক। তখন সাংবাদিক ও প্রকাশকরা তা মানতে চাননি। সেজন্য বইমেলা চলছে।’
‘আমার বাংলা একাডেমির অনেকেই করোনায় আক্রান্ত। আমি কীভাবে চাইব বইমেলা চলুক? বইমেলা খোলা রাখার এ সিদ্ধান্ত ভাল হলে ভাল লিখবেন, না হলে খারাপ লিখবেন’, যোগ করেন মহাপরিচালক।
কেন এই সিদ্ধান্ত, এ ব্যাপারে জানতে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি তা ধরেননি।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আগামীকাল সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করে ১১ দফা সম্বলিত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। প্রজ্ঞাপনে লকডাউনের মধ্যে সারা দেশে গণপরিবহণ বন্ধ, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ঘরের বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করার কথা বলা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না।
এ বছর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে বইমেলা উৎসর্গ করা হয়েছে। ২০২১ বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’।
করোনা মহামারিতে সামাজিক দূরত্বের কথা মাথায় রেখে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুট জায়গায় এবারের বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মোট ৫৪০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৩৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৭টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫৪টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৮০টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় থাকছে ৩৩টি প্যাভিলিয়ন। এ বছর ‘শিশু প্রহর’ থাকছে না। শিশু কর্নার সোহরাওয়ার্দীতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
প্রবেশপথে হাত ধোয়া ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মাস্ক ছাড়া কাউকে মেলায় ঢুকতে দেওয়া হবে না।