লকডাউনে সরকার ক্র্যাকডাউনে নেমেছে : মির্জা ফখরুল
লকডাউনকে কেন্দ্র করে সরকার ক্র্যাকডাউনে নেমেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ক্র্যাকডাউনে নেমে তারা আমাদের দল এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীদের হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব। ভিডিও অনলাইনে এ সংবাদ সম্মেলনে এসে মির্জা ফখরুল ইসলাম দেশের সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, লকডাউনের সুযোগ নিয়ে ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে এ রমজান মাসে এসেও সরকারের বিভিন্ন বাহিনী শহর, গ্রাম এবং পাড়া-মহল্লায় আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালাচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীদের আটক করে বিবিন্ন মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। সরকার দেশের সর্বত্র আতঙ্ক ও ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সরকারের ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কেউ যাতে টু শব্দ উচ্চারণ করতে না পারে, সেজন্যই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন চাল আসছে সরকার।
সরকারের দুঃশ্বাসনের বিবরণ তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, নির্যাতন-নিপীড়ন, গুম-খুন ইত্যাদি অপকর্মের মাধ্যমে দেশকে এক ভয়াবহ অরাজকতার দিকে ঠেলে দিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে দেশকে তারা কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। দেশকে বিএনপি শূন্য করাই যেন আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর এখন প্রধান লক্ষ্য। করোনাভাইরাসের এই মহাদুর্যোগের মধ্যেও বাগাড়ম্বর বক্তব্য প্রদান ছাড়া জনকল্যাণে কোনো কাজ না করে সরকার বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর বেপরোয়া গতিতে জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। করোনা মোকাবিলায় সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী সরকার আরো বেশি আগ্রাসী নাৎসিবাদী পথ অবলম্বন করে বিরোধী দলকে নিঃশেষ করার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে সরকারের এই ফ্যাসিবাদী নিষ্ঠুর আচরণের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করতে গিয়েও বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সরকারের সাঁড়াশি আক্রমণে পড়তে হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের এবং গ্রেপ্তারের হিড়িক শুরু হয়েছে।
এ সরকার নির্বাচিত নয়,তাদের কোনো গণভিত্তি নেই উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, অত্যাচার, নির্যাতন, গ্রেপ্তার, হামলা ও মামলা দিয়েই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। আর এ কারণেই এ পবিত্র রমজান মাসেও তারা নির্যাতনমূলক হীন কাজে লিপ্ত রয়েছে। সরকার যে করে হোক গ্রেপ্তার, হত্যা, গুম নির্যাতনের মধ্য দিয়ে বিরোধীদলের সংবিধানসম্মত অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা দমন করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে চায়।
বাংলাদেশে এখন কোনো গণতন্ত্র নেই জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে দেশে যে সরকার আছে, তারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। তারা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়েছে জনবিচ্ছিন্ন এ সরকার। প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করা হয়েছে। মিডিয়াকে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। এভাবে দেশে একটা অসম্ভব রকমের নিপিড়নকারী কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, করোনায় আক্রান্ত দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আল্লাহর অশেষ রহমতে এখন পর্যন্ত ভালো আছেন। সারা দেশের মানুষের দোয়ায় আশা করি, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবেন। চলমান করোনা মহামারি সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমানে মহামারি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় আক্রমণে বাংলাদেশের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। দুর্যোগের কাছে মানুষের অর্থ, অস্ত্র, ক্ষমতা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। করোনা সংক্রমণে মৃত্যুভয় সবাইকে জড়োসড়ো করে ফেলেছে। প্রতিদিন মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে মানুষের দুয়ারে হাজির হচ্ছে প্রাণঘাতী করোনা। দ্বিতীয় ধাপের করোনা সংক্রমণে গত কয়েকদিনে বাংলাদেশে মানুষের মৃত্যুর তালিকা লম্বা হয়েই যাচ্ছে। গতকাল করোনা আক্রান্ত হয়ে ৯৬ জনের মৃত্যু সংবাদে আঁতকে উঠেছে দেশের মানুষ। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাসকে যদি এখনি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তবে তা ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে।