লঞ্চ-নৌযান বন্ধ, ফেরিতে শুধু অ্যাম্বুলেন্স-পণ্য পারাপার
ঈদুল আজহা শেষে আগামীকাল শুক্রবার থেকে ফের শুরু হচ্ছে কঠোর লকডাউন। এদিন সকাল থেকে সব ধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ ও নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা আগামী ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ১২ পর্যন্ত চলবে।
অপরদিকে একই সময়ের জন্য ফেরিতে সব ধরনের যাত্রীবাহী গাড়ি ও যাত্রী পরাপারও বন্ধ থাকবে। এ সময়ে ফেরিতে শুধু জরুরি পণ্যবাহী গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স পারাপার হবে।
আজ বৃহস্পতিবার নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সাধারণ মানুষের চলাচলের সুবিধার কথা চিন্তা করে গত ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে আগামীকাল শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছিল, ২৩ জুলাই (আগামীকাল শুক্রবার) ভোর ৬টা থেকে ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত ফের কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর থাকবে।
সেই বিধিনিষেধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েই আজ নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় নতুন করে নৌযান ও ফেরি চলাচলের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধের তথ্য জানিয়েছে।
লঞ্চ-স্পিডবোট-ট্রলার বন্ধ
নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) জনিত রোগ সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ১৩ জুলাইয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামীকাল শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ নৌপথে সব ধরণের যাত্রীবাহী নৌযান (লঞ্চ, স্পিডবোট, ট্রলার ও অন্যান্য) চলাচল বন্ধ থাকবে।
অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীবাহী নৌযানের মালিক, মাস্টার, ড্রাইভার, স্টাফ, যাত্রীসাধারণ ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে উক্ত নির্দেশনা মেনে চলতে অনুরোধ করা হয়েছে। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফেরিতে গাড়ি ও যাত্রী পরিবহণ বন্ধ
নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম খান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকাল থেকে ফেরিতে যাত্রীবাহী সব ধরনের গাড়ি ও যাত্রী পরিবহণ বন্ধ থাকবে। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু জরুরি পণ্যবাহী গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স পারাপার করা হবে।
শিল্প-কারখানা বন্ধ, মাঠে সেনা
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আগামীকাল শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে আবারও শুরু হচ্ছে ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন (বিধিনিষেধ)। এ সময় শিল্প-কলকারখানাসহ বন্ধ থাকবে সব ধরনের যানবাহন ও অফিস-আদালত। মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে মাঠে থাকবে পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পাশাপাশি সেনাবাহিনী।
কঠোর বিধিনিষেধের এই সময়ে সরকারের জারি করা নির্দেশনা পূর্ণরূপে মেনে নিজ নিজ অবস্থানে থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
সাংবাদিকদের এক ভিডিও বার্তায় ফরহাদ হোসেন আজ বৃহস্পতিবার বলেন, আগামীকাল (২৩ জুলাই) থেকে পূর্বঘোষিত লকডাউন আগের চেয়ে কঠোরভাবে পালন করা হবে। সরকারি-বেসরকারি—সব ধরনের অফিস বন্ধ থাকবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি মাঠে থাকবে। পোশাক কারখানাসহ সব ধরনের শিল্প-কলকারখানাও বন্ধ থাকবে। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
যাঁরা কর্মস্থল ছেড়ে গ্রামে গেছেন, তাঁদের আসার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী জানান, বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপন বেশ আগেই জারি করা হয়েছে। কাজেই পূর্বঘোষণা থাকা সত্ত্বেও যাঁরা গ্রামে গেছেন, আমরা ধরে নিচ্ছি তাঁরা নিজ নিজ দায়িত্ব নিয়েই গেছেন। তারা বেশ ভালোভাবেই বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়টি জানেন। তাঁরা কর্মস্থলে ফিরতে চাইলে বিধিনিষেধ মেনেই ফিরবেন। যাঁরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন না, তাঁরা নিজ নিজ অবস্থানে থাকবেন।
সবাইকে বিধিনিষেধ মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে ফরহাদ হোসেন বলেন, একটু অবহেলা করলেই করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
বিধিনিষেধের আওতামুক্ত যা
এদিকে, গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মো. রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তিনটি বিষয়কে বিধিনিষেধের আওতামুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
১. খাদ্য ও খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ কল-কারখানা।
২. কোরবানির পশুর চামড়া পরিবহণ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ।
৩. ওষুধ, অক্সিজেন ও কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনকারী শিল্প।