লিগ্যাল এইড নিয়ে মানুষের মধ্যে ধারণা কম : বিচারপতি
সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান ও হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম বলেছেন, দেশের মানুষের মধ্যে লিগ্যাল এইড নিয়ে ধারণা কম। লিগ্যাল এইডের ধারণা পৌঁছে দিতে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, গরিবরা অর্থাভাবে ভালো আইনজীবী রাখতে পারেন না। এজন্য সরকার অসহায়, দুস্থ ও গরীব বিচারপ্রার্থীদের আইনি সেবা দেওয়ার জন্য ২০০০ সালে লিগ্যাল এইড প্রতিষ্ঠা করেছে। ধারণা না থাকায় তারা সেই সুবিধা নিতে পারছেন না।
আজ বৃহস্পতিবার ‘লিগ্যাল এইড ইন বাংলাদেশ : সার্ভ হিউম্যানিটি অ্যান্ড সেভ সোসাইটি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম এসব কথা বলেন। লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল জেলা-৩১৫ জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি মো. বশির উল্লাহ।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম বলেন, ‘গরীবের অর্থ নেই। ফলে, তারা ভালো আইনজীবী রাখতে পারেন না। কিন্তু, যারা অর্থ ও সম্পদশালী, তারা ভালো আইন, ভালো নজির ও শুনানি উপস্থাপন করতে পারেন। এ কারণেই সরকার অসহায়, দুস্থ ও গরীব বিচারপ্রার্থীদের আইনি সেবা দেওয়ার জন্য ২০০০ সালে লিগ্যাল এইড প্রতিষ্ঠা করেছে।’
বিচারপতি জাহাঙ্গীর বলেন, ‘লিগ্যাল এইড আইন প্রণয়নের পর আজ ২২ বছর পেরিয়েছে। কিন্তু, দেশের মানুষের মধ্যে লিগ্যাল এইড নিয়ে ধারণা কম। গ্রামের মানুষ এখনো জানে না, লিগ্যাল এইড কীভাবে কাজ করে।’
বিচারপতি জাহাঙ্গীর আরও বলেন, ‘অনেকে মনে করে লিগ্যাল এইডের কাছে আসলেই রায় পাওয়া যায়। অনেকে মনে করেন, লিগ্যাল এইড একটি মাধ্যম, টাকা পয়সা খরচ করতে হয়। কিন্তু লিগ্যাল এইডের দায়িত্ব রাষ্ট্র নিজেই নিয়েছে। এখানে কোনো বিচারপ্রার্থীর একটি পয়সাও খরচ করার সুযোগ নেই। এজন্য লিগ্যাল এইডের ধারণা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গণমাধ্যম প্রতিনিয়তই সেই ভূমিকা পালন করে চলেছে।’
বিচারপতি বলেন, ‘সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, আইনের চোখে সবাই সমান। সকলেই আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী। কিন্তু, আমার মনে পীড়া দেয়, আদৌ কি আমরা ইক্যুয়াল প্রটেকশন পাচ্ছি, ভেবে দেখবেন। অসহায়, দুস্থ বিচারপ্রার্থীদেরকে কি ঠিকমত লিগ্যাল সাপোর্ট দিতে পারছি? আমার মতে, পারছি না। এজন্য সম্মিলিতভাবে সকলকে নিজ নিজ স্থান থেকে কাজ করতে হবে। যদি এটা করতে পারি, তাহলে অসহায় ও দুস্থ মানুষকে সহায়তা করতে পারব।’
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম বলেন, ‘আমি সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই আমি কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করেছি। সেখানে গিয়ে বন্দিদের বক্তব্য শুনেছি। যাদের লিগ্যাল এইড দেওয়া দরকার, তাদের নিয়ে কাজ করছি। এ ছাড়া কিশোর সংশোধনাগারে গিয়েছি। অপরাধে জড়িয়ে শিশুরা সেখানে বন্দি। এ বয়সে যাদের বাবা-মায়ের কাছে থাকার কথা ছিল। কিন্তু, সমাজ সচেতন না হওয়ার কারণে শিশুদের এই দুরবস্থা।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তেজগাঁও কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল অধ্যাপক আঞ্জুমান আরা। তিনি বলেন, ‘সমাজে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বেড়েই চলেছে। প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে নারী ও শিশুরা। তরুণ সমাজ নেশায় বুদ হয়ে আছে। এখন বাবা-মায়ের স্থান হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে। যে সন্তানরা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাচ্ছেন, তারা কি একবারও চিন্তা করছেন, ওখানেই আপনারও স্থান হতে পারে। যাদের ভেতর মনুষ্যত্ব আছে তাদের মন তো একটু কাঁদার কথা।’
ইঞ্জিনিয়ার লায়ন মো. আব্দুল ওয়াহহাব বলেন, ‘আমরা সব সময় মানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছি। এ বছর চক্ষু শিবিরের আয়োজন করে ১০ হাজার মানুষকে বিনামূল্যে ছানি অপারেশন করানো হবে। দেড় লাখ বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম, এক লাখ মানুষকে ডায়াবেটিস পরীক্ষার আওতায় আনা, হুইল চেয়ার, সেলাই মেশিন ও গবাদি পশু বিতরণের কার্যক্রমও রয়েছে।’
অনুষ্ঠানে লায়ন জালাল আহমেদ, লায়ন মোহাম্মদ হানিফ, লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা জজ ফারাহ মামুন, অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান, অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বাবলী, অ্যাডভোকেট মুনমুন নাহার, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ফারজানা শম্পা ও তামান্না ফেরদৌস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।