শক্তি বাড়াচ্ছে গভীর নিম্নচাপ, ৬ জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তর ও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, দিনাজপুর, নীলফামারী ও চুয়াডাঙ্গা জেলার উপর তীব্র তাপপ্রবাহ এবং দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সরকার সবদিক থেকে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।
আবাহওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার (১০ মে) বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তর ও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর পারে। লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। তবে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, দিনাজপুর, নীলফামারী ও চুয়াডাঙ্গা জেলার উপর তীব্র তাপপ্রবাহ এবং দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশের দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী চারদিন বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন ছিল সৈয়দপুর ও রাজারহাটে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য কোনো সতর্কবার্তা নেই এবং কোনো সংকেত দেখাতে হবে না বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে বুধবার (১০ মে) রাতে আবহাওয়ার সবশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (চার) জানানো হয়, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর ও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৪২০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৩৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১১ মে) ক্রমান্বয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।
গভীর নিম্নচাপকেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হলো।
১নং দূরবর্তী সতর্ক সংকেতের মানে হলো- জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সম্মুখীন হতে পারে। দূরবর্তী এলাকায় একটি ঝড়ো হাওয়ার অঞ্চল রয়েছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬১ কিলোমিটার। ফলে সামুদ্রিক ঝড়ের সৃষ্টি হবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথের মানচিত্রে দেখা যায়, বুধবার (১০ মে) আন্দামান সাগরে অবস্থান করা নিম্নচাপটি ক্রমশ উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আগামী ১৪ মে বাংলাদেশের সেন্টমার্টিনের পাশ দিয়ে মিয়ানমার উপকূলে আঘাত হানবে। তবে ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ যে কোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে। সব সময় ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথের পূর্বাভাস ঠিক নাও হতে পারে। কারণ এর গতিপথ ক্রমশ বদলায়।
সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’মোকাবিলায় সরকার সবদিক থেকে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। সচিবালয়ে বুধবার (১০ মে) বিকেলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয় কমিটির সভার শুরুতে সাংবাদিকদের প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
এনামুর রহমান বলেন, ‘রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখেছি এটা উত্তর পশ্চিম দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ উপকূল থেকে গড়ে ১৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে। ১২ মে নাগাদ এটি উত্তর পূর্ব দিকে বাঁক নেবে এবং কক্সবাজার জেলা ও মিয়ানমার উপকূল দিয়ে অতিক্রম করবে। আঘাতের সময় ঘূর্ণিঝড়ের বেগ ধারণা করা হচ্ছে ঘণ্টায় ১৮০-২২০ কিলোমিটার থাকবে।’
ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় এসওডি (স্থায়ী আদেশবালী) অনুযায়ী সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পূর্বাভাস অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি-সিপিপিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আগাম সতর্কবার্তা প্রচারের জন্য।’