শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী আজ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী আজ ১৯ জানুয়ারি, মঙ্গলবার। ১৯৩৬ সালের আজকের দিনে জিয়াউর রহমান বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তাঁর ডাকনাম ছিল কমল। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করেন।
জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের সপ্তম রাষ্ট্রপতি, সাবেক সেনাপ্রধান এবং একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করে বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সূচনা করেন।
জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন এবং ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন।
বাবার চাকরির কারণে জিয়াউর রহমান কলকাতার হেয়ার স্কুলে লেখাপড়া করেন। ভারতবর্ষ ভাগের পর তাঁর বাবা সপরিবারে পাকিস্তানের করাচিতে চলে যান। তখন জিয়াউর রহমান করাচি একাডেমি স্কুলে ভর্তি হন।
করাচি একাডেমি থেকে জিয়াউর রহমান ১৯৫২ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ১৯৫৩ সালে করাচিতে ডি. জে. কলেজে ভর্তি হন। একই বছর তিনি কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৩ সালে তিনি কাকুল পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন প্রাপ্ত হন। সামরিক বাহিনীতে তিনি একজন সুদক্ষ প্যারাট্রুপার ও কমান্ডো হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেন এবং স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স কোর্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন।
করাচিতে দুই বছর চাকরির পর ১৯৫৭ সালে জিয়াউর রহমান ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলি হয়ে আসেন। তিনি ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেন। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে একটি কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে খেমকারান সেক্টরে তিনি অসীম বীরত্বের পরিচয় দেন। এই যুদ্ধে বীরত্বের জন্য পাকিস্তান সরকার জিয়াউর রহমানকে হিলাল-ই-জুরাত খেতাবে ভূষিত করে।
১৯৬৯ সালে মেজর পদে উন্নীত হয়ে জিয়াউর রহমান জয়দেবপুরে সেকেন্ড ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড পদের দায়িত্ব লাভ করেন। অ্যাডভান্সড মিলিটারি অ্যান্ড কমান্ড ট্রেনিং কোর্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য তিনি পশ্চিম জার্মানিতে যান এবং কয়েক মাস ব্রিটিশ আর্মির সঙ্গেও কাজ করেন।
১৯৭০ সালে একজন মেজর হিসেবে জিয়াউর রহমান দেশে ফিরে আসেন এবং চট্টগ্রামে নবগঠিত অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড পদের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে প্রথমে তিনি ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত হন এবং চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, রাঙামাটি, মিরসরাই, রামগড়, ফেনী প্রভৃতি স্থানে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেন। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত যুগপৎ ১১ নম্বর সেক্টরের ও জেড ফোর্সের কমান্ডার হিসেবে তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরে স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বের জন্য তাঁকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
এদিকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, বেলা ১১টায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ শেরেবাংলা নগরে শহীদ জিয়ার সমাধিতে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। দুপুর ১২টায় দলের বিভিন্ন ইউনিট এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন সেখানে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন।
এর আগে সকাল ৬টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এ ছাড়া জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দৈনিক সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে এবং ইতোমধ্যে পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় বিকেল ৩টায় ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা সভায় দেশব্যাপী জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দও সংযুক্ত থাকবেন।
এ ছাড়া শহীদ জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ পেশাজীবী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন তাঁর জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে চিত্রাঙ্কন, রচনা প্রতিযোগিতা, আলোকচিত্র প্রদর্শন এবং বিএনপি ও ড্যাবসহ চিকিৎসকদের সংগঠন ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করবে।
অনুরুপভাবে পরের দিন বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে ড্যাব-ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা হবে।
সারা দেশে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের ইউনিটগুলো নিজেদের সুবিধানুযায়ী সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করবে। আর জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে সুপ্রিম কোর্ট বার অডিটোরিয়ামে বুধবার দুপুর ২টায় শহীদ জিয়ার কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।