শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী আজ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী আজ বুধবার।
১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি জিয়াউর রহমান বগুড়া জেলার বাগবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তাঁর ডাকনাম ছিল কমল। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করে।
জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের সপ্তম রাষ্ট্রপতি, সাবেক সেনাপ্রধান ও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে দলটি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ১১টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের মাজারে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। একইসঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে এদিন বেলা ২টায় রমনায় ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে।
অন্যদিকে ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আজ এবং বিএনপির পক্ষ থেকে চিকিৎসকরা আগামীকাল (২০ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করবেন।
এ ছাড়া সারা দেশে বিভিন্ন পর্যায়ের ইউনিট নিজেদের সুবিধানুযায়ী জিয়াউর রহমানের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করবে।
জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন এবং ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। বাবার চাকরির কারণে জিয়াউর রহমান কলকাতা হেয়ার স্কুলে লেখাপড়া করেন। ভারতবর্ষ ভাগের পর তাঁর বাবা সপরিবারে পাকিস্তানের করাচিতে চলে গেলে তখন জিয়াউর রহমান করাচি একাডেমি স্কুলে ভর্তি হন।
করাচি একাডেমি থেকে জিয়াউর রহমান ১৯৫২ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ১৯৫৩ সালে করাচিতে ডি জে কলেজে ভর্তি হন। একই বছর তিনি কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৩ সালে তিনি কাকুল পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশনপ্রাপ্ত হন। সামরিক বাহিনীতে তিনি একজন সুদক্ষ প্যারাট্রুপার ও কমান্ডো হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেন এবং স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স কোর্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। করাচিতে দুই বছর চাকরির পর ১৯৫৭ সালে তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলি হয়ে আসেন। তিনি ১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেন।
১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে একটি কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে খেমকারান সেক্টরে জিয়াউর রহমান অসীম বীরত্বের পরিচয় দেন। এই যুদ্ধে বীরত্বের জন্য পাকিস্তান সরকার তাঁকে হিলাল-ই-জুরাত খেতাবে ভূষিত করে।
১৯৬৯ সালে মেজর পদে উন্নীত হয়ে জিয়াউর রহমান জয়দেবপুরে সেকেন্ড ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড পদের দায়িত্ব লাভ করেন। অ্যাডভান্সড মিলিটারি অ্যান্ড কমান্ড ট্রেনিং কোর্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য তিনি পশ্চিম জার্মানিতে যান এবং কয়েক মাস ব্রিটিশ আর্মির সঙ্গেও কাজ করেন।
১৯৭০ সালে একজন মেজর হিসেবে জিয়াউর রহমান দেশে ফিরে আসেন এবং চট্টগ্রামে নবগঠিত অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড পদের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে প্রথমে তিনি ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত হন এবং চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, রাঙামাটি, মিরসরাই, রামগড়, ফেনী প্রভৃতি স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন। জুন হতে অক্টোবর পর্যন্ত যুগপৎ ১১ নম্বর সেক্টরের ও জেড ফোর্সের কমান্ডার হিসেবে তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বের জন্য তাঁকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতার অবদান স্মরণ করেন। সেইসঙ্গে তিনি জিয়াউর রহমানের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।