শিক্ষকতায় এসে জঙ্গি হন এমদাদুল : র্যাব
ময়মনসিংহের একটি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করে স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন এমদাদুল হক ওরফে উজ্জ্বল মাস্টার। তবে, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় ওই স্কুল থেকে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পরবর্তীকালে ২০০২ সালে মুক্তাগাছায় একজন জঙ্গি নেতার বয়ান শুনে শায়খ আব্দুর রহমানের কাছে বায়াত গ্রহণ করেন। এরপর জামালপুরে একটি আস্তানায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ব্যাপক তৎপরতা থাকায় দ্রুত তিনি ময়মনসিংহের অঞ্চলের জঙ্গিনেতা বনে যান।
আজ বৃহস্পতিবার ভোরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলার সিটি ডেভলপমেন্ট হাউজিংয়ের একটি আবাসিক ভবন থেকে এমদাদুলকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তাঁর বাসা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচটি গুলি, রাসায়নিক দ্রব্য, দেশীয় বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, উগ্রবাদী বই ও তিন লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, বিএ পাস করে স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন এমদাদুল হক ওরফে উজ্জল মাস্টার। তবে, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় ওই স্কুল থেকে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। শুরুতে উজ্জল মাস্টার শীর্ষ জঙ্গি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই ও সালাহউদ্দিন সালেহীনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। তিনি জেএমবির শীর্ষ নেতাদের ময়মনসিংহে সফরকালীন সময়ে বিশেষ দায়িত্বে থাকতেন। বিশেষ করে নেতাদের গোপন আস্তানায় অবস্থান, মিটিং ও বয়ান আয়োজনে ভূমিকা রাখতেন। এমনকি তিনি জঙ্গি নেতাদের গোপন বৈঠকের স্থানও ঠিক করে দিতেন।
গত ৪ সেপ্টেম্বর ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ময়মনসিংহে চার জঙ্গিকে আটক করার দাবি করে র্যাব। ওই চার জনসহ জেএমবির ১০ সদস্য এমদাদুলের কাছ থেকে বায়াত গ্রহণ করেন। র্যাবের দাবি, যাঁরা তাঁর কাছ থেকে বায়াত গ্রহণ করেছেন, তাঁদের নিয়ে এমদাদুল পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, এমদাদুলের কাছে বায়াত পাওয়া জঙ্গি সদস্যদের কেউ কেউ এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারে তারা (র্যাব) অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তিনি দাবি করেন, এমদাদুল হক একটি বিভক্ত জেএমবি গ্রুপের কর্ণধার। এই গ্রুপের সদস্যরা সব তাঁর কাছ থেকে বায়াতপ্রাপ্ত হয়েছেন। শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায় কার্যকরের পর সংগঠনটি নেতৃত্বশূন্য হয়ে যায়। ফলে জেএমবি নিজেদের মধ্যে অন্তর্কোন্দলে জড়ায়। সংগঠনের ভেতর ও বাইরে দুটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়। জঙ্গিনেতা সারোয়ার জাহানের নেতৃত্বে জেএমবি সুসংহত হয় এবং গড়ে তোলা হয় জেএমবি ‘সারোয়ার-তামিম গ্রুপ’। এরপর নতুন করে সংগঠনকে চাঙা করতে তিনি বিভক্ত বা নতুন গ্রুপ তৈরি করে কাজ করে যাচ্ছিলেন। যারা এ গ্রুপের সদস্য, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই জেএমবির সঙ্গে সংযুক্ত।
র্যাব জানায়, ২০১৬ সালে হলি আর্টিজান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন জেএমবির আমির সারোয়ার জাহান ও তামীম চৌধুরী। তাঁরাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নাশকতার ছক তৈরি করেছিলেন। একই বছরের ৮ অক্টোবর র্যাবের অভিযানে পালাতে গিয়ে বিল্ডিং থেকে পড়ে জেএমবির তৎকালীন আমির সারোয়ার জাহান মারা যান। হলি আর্টিজান ঘটনার পর এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার জঙ্গি (বিভিন্ন সংগঠন এবং জেএমবির আট শতাধিক সদস্য) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এতে জেএমবির সাংগঠনিক সক্ষমতা দুর্বল হয়ে গেছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, জঙ্গিরা বিভিন্ন সময়ে লুট, ছিনতাই ও ডাকাতির মাধ্যমে অর্থ জোগাড় করছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ময়মনসিংহ, জামালপুর ও রাজশাহীতে অভিযান চালানো হয় এমদাদুলকে গ্রেপ্তার করতে।
২০০৩ সালে মুক্তাগাছায় ব্র্যাক অফিসে ডাকাতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল জঙ্গি এমদাদুল হকের। এ ছাড়া নাশকতা ও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ঢাকা-ময়মনসিংহের বিভিন্ন থানায় ২০০৭, ২০১২, ২০১৫ ও ২০২০ সালে মামলা হয়েছে। ২০০৭ সালে মুক্তাগাছায় স্থানীয় জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে নাশকতার গোপন বৈঠক চলাকালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মুখে পড়েন তিনি। সে সময় এমদাদুল হক পালিয়ে যান।
র্যাব পরিচালক বলেন, ২০১২ সালে রাজধানীর উত্তরা থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার হন এমদাদুল হক। গোপন বৈঠকে নাশকতার পরিকল্পনার মামলায় দুই বছর কারাগারেও ছিলেন। ২০১৫ সালে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও বিস্ফোরকসহ গ্রেপ্তার হন। ২০১৬ সালে জামিন নিয়ে পুনরায় আত্মগোপনে চলে যান। এ সময়ও আগের মতো ছদ্মবেশে রাজবাড়ী, রংপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় অবস্থান করেন এবং জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে যান।