শিশু অপহরণ, চার হাত বদলের পর উদ্ধার
তিন বছরের শিশু মো. ওমর ফারুক। বাসার সামনের রাস্তায় খেলছিল। এমন সময় মো. আলীম নামের এক ব্যক্তি ওমরকে চকলেট কিনে দেওয়ার লোভ দেখান। এতে খুশি হয় ওমর। পরে দোকানে নেওয়ার নাম করে রিকশায় তুলে অপহরণ করা হয় ওমরকে। ঘটনাটি ঘটে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর কদমতলী থানার শ্যামপুরের শহীদ মোক্তার হোসেন সড়কে।
পুলিশের দাবি, ওমরকে অপহরণ করে ছয় হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেন আলীম। বিক্রি করেন সজীব চন্দ্র দাস নামে একজনের কাছে। তারপর সজীব শিশু ওমরকে তার পূর্বপরিচিত শ্যামামণি দাসের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর শ্যামামণি ওমরকে মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানার উত্তর শ্রীবাড়ী এলাকার বাবুল সরকার ও মিনুকা রানীর কাছে পৌঁছে দেন। সেখান থেকেই পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে।
আজ শনিবার বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর ও পরিদর্শক (তদন্ত) সজীব দে এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জামাল উদ্দিন মীর বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার বাবুল সরকার ও মিনুকা রানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে ওমরকে উদ্ধার করা হয়। ছেলে সন্তানহীন এ দম্পত্তি ওমরকে লালন-পালন করার জন্য কিনেছিলেন।’
পরিদর্শক (তদন্ত) সজীব দে বলেন, ‘বাবুল সরকার ও মিনুকা রানীর কোনো ছেলেসন্তান ছিল না। কিন্তু, তাঁদের আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি ছেলেসন্তানের। সেজন্য বাবুল বৈধ উপায়ে একটি ছেলেশিশু পাওয়ার বাসনা পোষণ করেন তার জামাতা শ্যামামণি দাসের কাছে। এ কথা শ্যামামণি জানার পর সজীব চন্দ্র দাসের সঙ্গে আলোচনা করেন। এরপর সজীব টাকার বিনিময়ে একটি বাচ্চা সন্তান চান আলীমের কাছে।’
সজীব দে বলেন, ‘আলীম এক লাখ টাকার বিনিময়ে বৈধ বাচ্চাই দিতে চেয়েছিলেন সজীবকে। তারপর থেকে অনুসন্ধানে নেমে পড়েন আলীম। এর মধ্যে গত পাঁচ আগস্ট যখন শ্যামপুরের শহীদ মোক্তার হোসেন সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন দেখতে পান শিশু ওমর রাস্তার ওপর খেলছে। তারপর ওমরের পাশে গিয়ে আলীম চকলেট খাওয়ানোর লোভ দেখান। এতে শিশুটি খুশি হয় এবং খেতে চায়।’
‘আলীম দোকানে নেওয়ার কথা বলে কোলে নেন ওমরকে। একপর্যায়ে ওমরকে রিকশায় তুলে ডেমরার জুরাইনের দিকে নিয়ে চলে যান আলীম। সেখান থেকে সাভার হয়ে ধামরাই চলে যান। তারপর আলীম ওমরকে বুঝিয়ে দেন সজীব চন্দ্র দাসকে। অনুসন্ধানে আমরা জানতে পেরেছি, ওমরকে ছয় হাজার টাকার বিনিময়ে আলীম বিক্রি করে দেন।’
সজীব দে আরও বলেন, ‘সজীব ওমরকে বুঝে পাওয়ার পর শ্যামামণি দাসের কাছে হস্তান্তর করেন। শ্যামা আবার তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ি মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার বাবুল সরকার ও মিনুকা রানীর কাছে ওমরকে হস্তান্তর করেন। সেখানে থেকেই শিশু ওমর লালিত-পালিত হচ্ছিল। গতকাল রাতে কদমতলী থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওমরকে সেখান থেকে উদ্ধার করে।’
পরিদর্শক আরও বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট রাতে থানায় গিয়ে ওমরের বাবা মো. মেহেদী হাসান অপহরণের অভিযোগ করে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার পর থেকে কদমতলী থানার শ্যামপুরের শহীদ মোক্তার হোসেন রোডের অন্তত ৫৫টি সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ জব্দ করে। তারপর আলীমকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনাসহ প্রযুক্তির সহায়তায় কদমতলী থানার জুরাইন রেলগেইট থেকে আলীমকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
‘আলীমের দেওয়া তথ্যমতে, ঢাকার ধামরাই থানার নান্না সোয়াপুর এলাকা থেকে সজীব চন্দ্র দাস ও শ্যামামণি দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানার উত্তর শ্রীবাড়ী এলাকার বাবুল সরকার ও মিনুকা রানীর হেফাজত থেকে ভুক্তভোগী শিশু ওমর ফারুককে উদ্ধারসহ বাবুল ও মিনুকাকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধারের পর ওমরকে তার বাবা-মার কাছে ফেরত দেয় কদমতলী থানা পুলিশ। হারানো শিশুকে ফিরে পেয়ে ওমরের বাবা-মা অত্যন্ত খুশি হন এবং পুলিশের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন', যোগ করেন সজীব দে।