শৈলকুপার ভোটে সংঘর্ষ-ভাঙচুর, জয়ী আ.লীগের প্রার্থী
ভোর ৫টা। প্রচণ্ড শীত। ভোটারেরা তখন থেকেই লাইনে দাঁড়ানো শুরু করেন। উদ্দেশ্য ভোট দেওয়া। ফলে ভোর থেকেই উৎসবমুখর হয়ে উঠে ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ। নির্দিষ্ট সময় অর্থাৎ বিকেল ৪টার পরও পৌরসভার কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌরসভার কবিরপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মিজানুর রহমানের ভাষ্যমতে, তিনি তাঁর জীবদ্দশায় কখনো ভোর থেকে ভোটারের এমন লাইন দেখেননি।
তবে এই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থীদের সমর্থকেরা উত্তেজিত হতে থাকেন। সকাল ১০টার দিকে খুল্লে ভোটকেন্দ্রের পেছনে বালিয়াডাঙ্গা ও মতনেজা গ্রামে নৌকা ও স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থীর সমর্থকরা জড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষে। এ সময় স্বতন্ত্র (আ.লীগের বিদ্রোহী) তৈয়বুর রহমান খানের দুই সমর্থক আহত হন। খবর পেয়ে বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এরপর দুপুরের দিকে ঝাউদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর করে প্রতিপক্ষ নৌকার সমর্থকরা। খবর পেয়ে পরক্ষণে ওই এলাকায় অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এতে কিছুটা শান্ত হয় পরিস্থিতি।
এ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. খলিলুর রহমান মাঠ ছাড়েননি। তবে অন্য মেয়র পদপ্রার্থীদের মতো প্রকাশ্যে তাঁর কোনো তৎপরতা ছিল না। এ ছাড়া ভোটযুদ্ধ দেখা গেছে কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের মধ্যে। জয়ী হতে মরিয়া হয়ে উঠেন তাঁরা।
শৈলকুপা পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন চারজন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে লড়েছেন ৩২ জন এবং সংরক্ষিত তিনটি আসনে নারী কাউন্সিলর পদে লড়েছেন ১২ জন। শৈলকুপা পৌরসভায় মোট ভোটার ২৮ হাজার ৬৩২। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৪ হাজার ১১৩ ও নারী ভোটার ১৪ হাজার ৫১৯ জন।
সাধারণ ভোটারেরা জানায়, প্রথমবারের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দিতে পেরে তারা খুশি। তবে মেশিনের সঙ্গে পূর্ব পরিচিত না হওয়ায় ভোট দিতে বিলম্ব হয়েছে তাদের। বিকেল ৪টার পরেও ভোটগ্রহণ করা হয়েছে খালকোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মুহাম্মদ ওয়ালিউর রহমান জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রে প্রবেশ করা ব্যক্তিদের বিকেল ৪টার পরও ভোটগ্রহণ করা হয়েছে।
কবিরপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং অফিসার মিজানুর রহমান জানান, ভোর ৫টা থেকে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন আগে কখনো দেখেননি তিনি। তাঁর ভাষায়, কারো চোখেমুখে ভয় কিংবা আতংক ছিল না। ইভিএম মেশিন সম্পর্কে ভোটারদের ধারণা কম থাকায় ভোট দিতে দেরি হয়েছে।
জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে জেলা প্রশাসন রিটার্নিং অফিসারকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। এখানে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, এপিবিএন, সশস্ত্র আনসার মোতায়েন করা হয়। ১৫টি ভোটকেন্দ্রের জন্য ১৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসহ ভ্রাম্যমাণ আদালতের জন্য আরো দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেছেন।
নির্বাচন পরবর্তী সহিংস ঘটনা আর যেন না ঘটে সেজন্য প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান সরোজ কুমার নাথ।
শৈলকুপার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, ‘কোনো প্রার্থী ভোট নিয়ে কোনো অভিযোগ করেননি। ভোটারদের ভেতরে যে ভয় আর আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল, সেটাকে ছাপিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।’
ভোটগণনা শেষে ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন কাজী আশরাফুল আজম। তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১০ হাজার ৮৭। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) তৈয়বুর রহমান খান। তিনি পেয়েছেন সাত হাজার ২৮১ ভোট। ধানের শীষ প্রতীকের পদপ্রার্থী মো. খলিলুর রহমান পেয়েছেন এক হাজার ৫৬৯। জাতীয় পার্টির লাঙল মার্কার আবু জাফর পেয়েছেন ১৯২ ভোট।
এদিকে বেসরকারিভাবে ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর শৈলকুপা উপজেলা শহরে বিজয় মিছিল বের করেন আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা। সেখানে দলীয় নেতাকর্মীদের উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাতে এ নির্বাচনকে ঘিরে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। প্রথমে ওই দিন রাত ৮টার দিকে দুই কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে এক প্রার্থীর ভাই ও আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত হোসেন বল্টু নিহত হন। এর পাঁচ ঘণ্টা পর রাত ১টার দিকে প্রতিপক্ষ কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মো. আলমগীর খাঁন বাবুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।